হঠাৎ পিরিয়ড বন্ধ হওয়ার কারণ এবং করণীয় কি তা জানুন
পিরিয়ডের লক্ষণ বনাম গর্ভাবস্থার লক্ষণপ্রতিটি মেয়ের জীবনের প্রাকৃতিকভাবে দেখা দিয়ে থাকে মাসিক। আর এ মাসিক একটি
মেয়ের প্রতি মাসেই সাধারণত একটি নির্দিষ্ট তারিখে হয়ে থাকে। কিন্তু কখনো কখনো
দেখা যায় যে হঠাৎ পিরিয়ড বন্ধ হয়ে যাই। কিন্তু হঠাৎ পিরিয়ড বন্ধ হওয়ার কারণ
অজানায় থেকে যায়। আর তাইতো সেই সকল কারণ আমরা আজকে আপনাদের সামনে তুলে ধরার
চেষ্টা করব।
আপনারা আমাদের লিখা আর্টিকেল হঠাৎ পিরিয়ড বন্ধ হওয়ার কারণ করার মাধ্যমে মাসিক
সম্পর্কে বিভিন্ন রকম জানা-অজানা তথ্য জানতে পারবেন। তাই সেই সকল প্রয়োজনীয়
তথ্য জানতে আর্টিকেলটি বিস্তারিত ভাবে পড়তে হবে।
তারিখ অনুযায়ী মাসিক না হওয়ার কারণ
প্রতি মাসে একটি নির্দিষ্ট তারিখে মাসিক হবে এটি একটি মেয়ের প্রতি মাসের রুটিন।
বয়ঃসন্ধি কাল থেকে শুরু করে বৃদ্ধকাল পর্যন্ত এটি একটি মহিলার জীবনের সাথে
ওতপ্রোতভাবে জড়িত থাকে। কখনো কখনো একটু আগে অথবা পিছে হলেও একটি নির্দিষ্ট তারিখ
থাকে যেই তারিখে একজন মহিলার মাসিক দেখা দিয়ে থাকে।
আরও পড়ুনঃ প্রসবের কিছুদিন আগের লক্ষণ
আর তাইতো সেই তারিখের কাছাকাছি আসার সময় একজন মহিলা পূর্ব প্রস্তুতি নিয়ে থাকে।
অনেক সময় এই নিয়মের বিপরীতমুখী দেখা দেয়। মানে হচ্ছে নির্দিষ্ট তারিখে মাসিক
হয় না। নির্দিষ্ট তারিখ পার হয়ে যাওয়ার পরেও মাসিক হয় না।
আর সেই কারণেই চিন্তার মুখোমুখি হতে হয়। অনেক সময় অনেকেই নির্দিষ্ট সময়ে মাসিক
না হওয়ার নির্দিষ্ট কারণ জানেনা। আর তাইতো আমরা আমাদের আর্টিকেলের এই অংশে
আপনাদের সামনে তারিখ অনুযায়ী মাসিক না হওয়ার বেশ কিছু কারণ তুলে ধরলাম।
- নির্দিষ্ট সময়ে মাসিক না হওয়ার সবথেকে প্রধান কারণ হচ্ছে গর্ভবতী হওয়ার। যদি কোন মহিলা গর্ভবতী হয় তাহলে সেই মহিলার ক্ষেত্রে দেখা যায় যে নির্দিষ্ট তারিখে মাসিক হয় না।
- আবার কখনো কখনো শারীরিক ওজনের কম অথবা বেশি ভাবার কারণেও নির্দিষ্ট তারিখে মাসিক হওয়া থেকে বিরত থাকতে পারে।
- মহিলাদের একটি পরিচিত রোগ হচ্ছে অ্যামেনোরিয়া এই রোগের কারণেও নির্দিষ্ট সময়ে মাসিক হয় না।
হঠাৎ পিরিয়ড বন্ধ হওয়ার কারণ
সামনের মাসে সঠিক সময়ে মাসিক হয়েছে কিন্তু এই মাসে সেই তারিখ পার হয়ে যাচ্ছে
কিন্তু মাসিক হচ্ছে না। এমন সমস্যার মুখোমুখি কমবেশি প্রতিটি মেয়েই হয়ে থাকে।
এটি ধরা যেতে পারে একজন মহিলার অতি পরিচিত একটি সমস্যা।
আরও পড়ুনঃ মেয়েদের জরায়ুতে ক্যান্সার কেন হয়
কিন্তু এই সমস্যার সমাধান কি? এটি কি আসলে কোনরকম বড় ধরনের সমস্যা কিংবা
বিশেষভাবে চিন্তা করার বিষয়? আপনাদের মনের ভেতর থাকা এই ধরনের প্রশ্নের উত্তর
আমরা দেব আর্টিকেলের এই অংশে। আপনারা এই অংশটি পড়লে খুব সহজেই বুঝতে পারবেন একজন
মহিলার কি কি কারণে হঠাৎ পিরিয়ড বন্ধ হয়ে যায়। এই সম্পর্কে অনেক রকম
গুরুত্বপূর্ণ তথ্য আলোচনা করব।
- কিছু কিছু মহিলার দেখা যায় যে অতিরিক্ত ওজন। এতটাই ওজন বৃদ্ধি পাচ্ছে যে তার সাধারণভাবে চলাফেরা করা মুশকিল হয়ে উঠেছে। এমন অবস্থায় সেই মহিলার মাসিক বন্ধ হতেই পারে। একজন মহিলার মাসিক হয়ে থাকে একটি নির্দিষ্ট প্রক্রিয়ায়। যদি অতিরিক্ত ওজন বেড়ে যায় সেই প্রক্রিয়ায় ব্যাঘাত ঘটে ফলে মাসিক বন্ধ হয়ে যাই।
- অনেকেই রয়েছেন শরীরের ওজন কমানোর জন্য অতিরিক্ত ব্যায়াম অথবা ভারী ব্যায়াম করে থাকে। ওজন কমানোর জন্য অতিরিক্ত ব্যায়াম ও হতে পারে মাসিক বন্ধ হওয়ার একটি কারণ। ওজন কমানোর জন্য কখনোই অতিরিক্ত ব্যায়াম করা যাবে না।
- আমাদের জীবনযাত্রায় এখন স্বাস্থ্যকর খাবারের চেয়ে অস্বাস্থ্যকর খাবার আমরা বেশি খেয়ে থাকি। আর সেই কারণে আমাদের শরীরে দেখা দেয় পুষ্টির অভাব অর্থাৎ অপুষ্টি। আর সেই অপুষ্টির কারণেই একজন মহিলার মাসিক বন্ধ হতে পারে।
- আমাদের সমাজে কিছু কিছু মহিলা রয়েছেন যারা থাইরয়েডের সমস্যায় ভুগছেন। বেশ কয়েক বছর থেকেই এই রোগ শরীরে বাসা বেঁধে রয়েছে। থাইরয়েড এমন ধরনের একটি সমস্যা যা আমাদের হরমোনের উপর প্রভাব ফেলে। আর হরমোনের তারতম্যর কারণে প্রভাব পড়ে মাসিকের ওপর। সেই কারণে মাসিক বন্ধ হতে পারে।
- আমরা বর্তমানে এমন একটি সময়ে বসবাস করছি যেখানে প্রতিদিন খাবারের চেয়ে ঔষধ বেশি খেতে হচ্ছে। আর এটি বাস্তবতা। ছোট বড় বিভিন্ন সমস্যাতে আমরা বিভিন্ন রকম ঔষধ সেবন করে থাকি। কিছু কিছু ঔষধ রয়েছে যে সকল ঔষধের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া ভয়ংকর রূপ ধারণ করে। আবার কিছু কিছু ঔষধের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া প্রভাব ফেলে মাসিকের উপর। সেই কারণেও মাসিক বন্ধ হতে পারে।
- আমাদের সকলের জীবনে এমন একটি বয়স আছে যে সময় আমাদের মানসিক চাপ অনেকটাই বেড়ে যায়। ফ্যামিলি ক্যারিয়ার বিভিন্ন বিষয় নিয়ে বিভিন্ন রকম চিন্তার কারণে দিনে দিনে মানসিক চাপ বৃদ্ধি পেতে থাকে। মহিলাদের ক্ষেত্রে দেখা যায় যে মানসিক চাপ বৃদ্ধি হওয়ার প্রভাব তার মাসিকের উপর পরে অর্থাৎ মাসিক বন্ধ হয়ে যায়। সেহেতু বলা যায় মানসিক চাপ ও মাসিক বন্ধ হওয়ার একটি কারণ।
- কখনো কখনো মহিলাদের পলিসিস্টিক ওভারি সিনড্রোম এর কারণেও মাসিক বন্ধ হতে দেখা যায়। এই সমস্যার কারণে শরীরের হরমোনের তারতম্য সৃষ্টি হয় আর সেই কারণে মাসিক বন্ধ সহ আরো বিভিন্ন রকম সমস্যা দেখা দিতে পারে।
হঠাৎ পিরিয়ড বন্ধ হলে করণীয়
একজন মহিলার জীবনে নিয়মিত মাসিক হওয়া এটি একটি স্বাভাবিক বিষয় কিন্তু অনিয়মিত
মাসিক এটি স্বাভাবিক বিষয় নয়। অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায় যে মাসিক অনেকটাই নির্ভর
করে সেই মহিলার গর্ভধারণ করার উপর। কোন মহিলার যদি অনিয়মিত মাসিক হয় তাহলে তার
ক্ষেত্রে দেখা যায় যে গর্ভধারণ করার সময় বিভিন্ন রকম সমস্যা দেখা দিচ্ছে।
আরও পড়ুনঃ মেয়েদের তলপেটের ব্যথা কিসের লক্ষণ
তাই এখন অনেক সচেতন মহিলা রয়েছেন যারা মাসিকের কোনরকম সমস্যা হলে তা ঠিক করা
চেষ্টা করেন। কিন্তু এখনো অনেক এমন মহিলা রয়েছেন যারা অনিয়মিত মাসিক এটিকে খুব
একটা গুরুত্ব দেয় না। কিন্তু এটি কখনোই করা ঠিক হবে না।
অনিয়মিত মাসিক হলে অবশ্যই সেই সমস্যার সমাধান করতে হবে। হঠাৎ পিরিয়ড বন্ধ হওয়া
কিংবা অনিয়মিত মাসিক হওয়ার বেশ কিছু কারণ রয়েছে। আর যে সকল কারণ আমরা খুব
সুন্দর ভাবে আপনাদের সামনে উপরের অংশে আলোচনা করেছি। তাই প্রথমে চিহ্নিত করুন কোন
কারণে আপনার হঠাৎ পিরিয়ড বন্ধ হয়েছে।
সেই সমস্যা চিহ্নিত করার পর তার সমাধান খুঁজতে হবে। যদি নিজে থেকেই সমাধান করা
সম্ভব হয় তাহলে নিজে থেকেই সমাধান করতে হবে আর যদি নিজে থেকে সমাধান করা সম্ভব
না হয় তাহলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
পিরিয়ড না হলে কি খাওয়া উচিত
মাসিকের সমস্যা এমন একটি সমস্যা যে সমস্যা সমাধান না করলে হয়তো একজন মহিলা কখনোই
সন্তানের মুখ দেখতে পাবে না। তাই মাসিকের সমস্যা দেখা দিলে সেই সমস্যা সমাধান
করার চেষ্টা করতে হবে। সমস্যা চিহ্নিত করার পর তা সমাধান করার বিভিন্ন রকম উপায়
থাকে।
আরও পড়ুনঃ পুরুষের বন্ধ্যাত্ব দূর করার উপায়
তার মধ্যে একটি উপায় হচ্ছে কিছু খাবার। হয়তো অনেকেই এই কথা শুনে আশ্চর্য হবেন।
আসলেই কি এমনটা সম্ভব? বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষা দ্বারা দেখা গেছে যে কিছু কিছু
খাবার রয়েছে যে সকল খাবার একজন মহিলার মাসিকের উপর প্রভাব ফেলে থাকে।
সেই সকল খাবার খাওয়ার ফলে বন্ধ হওয়া ভিডিও হওয়ার সম্ভাবনা দেখা যায়। কিন্তু
সকল ক্ষেত্রেই যে এমনটা হবে তা কিন্তু নয়। কিছু কিছু খাবার রয়েছে না হলে সেই
সকল খাবার খাওয়া উচিত। আমরা এখন আপনাদের সামনে সংক্ষেপে সেই সকল খাবার এর নাম
তুলে ধরবো।
- শসা
- তরমুজ
- তেঁতুলের পাল্প
- স্ট্রবেরির পাতা
- মসুরের ডালের স্যুপ
- জেলটিন
- অ্যাপেল সিডার ভিনেগার
- লেবুর রস
- আমের ছাল
- দারুচিনি দিয়ে তৈরি চা
- পেঁপে
- ভিটামিন সি জাতীয় খাবার
- আদা
দুই মাস মাসিক না হওয়ার কারণ
অনেক সময় দেখা যায় যে কিছু কিছু মহিলার ক্ষেত্রে মাসিক একমাস হওয়ার পর দুই মাস
বন্ধ থাকে। এই কারণে বিবাহিত মহিলারা প্রেগন্যান্সি টেস্ট করান আর অবিবাহিত
মহিলারা চিন্তিত হয়ে পড়েন। কিন্তু দুই মাস পর আবার মাসিক দেখা দেয়।
এমনটা হওয়ার কারণ কি? তা কি আপনি বলতে পারবেন। এমনটা হওয়ার কিছু প্রাথমিক কারণ
হচ্ছে ঠাণ্ডা লাগা, সর্দি কিংবা গলার কোনরকম ইনফেকশন। এ সকল কারণে কোন মহিলার এক
থেকে দুই মাস মাসিক বন্ধ থাকতে পারে। এই সমস্যাগুলো সমাধান হলে আবার নিয়মিতভাবে
মাসিক হয়ে থাকে থাকে।
কিন্তু কিছু কিছু সমস্যা রয়েছে যে সকল সমস্যার কারণে দীর্ঘমেয়াদী সময়ে মাসিক
বন্ধ থাকতে পারে। সেই সকল সমস্যা গুলো চিহ্নিত করে চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে কাজ
করতে হবে। তাহলে খুব সহজেই সেই সকল সমস্যার সমাধান হয় এবং নিয়মিত মাসিক হয়ে
থাকে।
পরামর্শমূলক কিছু কথা
অনেকেই মনে করেন যে অনিয়মিত মাসিকের সমস্যা তেমন একটি বড় বিষয় নয়। আর সে
কারণে কোনরকম চিকিৎসা করাই না। কিন্তু ভবিষ্যতে বাচ্চা নেওয়ার সময় দেখা দেয় যত
রকমের সমস্যা। আর এই সমস্যায় পড়ে অনেক মহিলাই হতাশায় ভোগেন।
তাই আমাদের পরামর্শ হবে ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে অনিয়মিত মাসিকের সমস্যা যত
দ্রুত সম্ভব সমাধান করার চেষ্টা করুন। নয়তো এমন একটি সময় আসবে যখন শুধুমাত্র
আফসোস করতে হবে। আশা করছি আমরা আমাদের আর্টিকেল হঠাৎ পিরিয়ড বন্ধ হওয়ার কারণ এর
দ্বারা আপনাদের মাঝে মাসিক সম্পর্কে কিছু সঠিক তথ্য পৌঁছে দিতে পেরেছি।
আর এই সঠিক তথ্য পৌঁছে দেওয়াই ছিল আমাদের একমাত্র উদ্দেশ্য। মাসিক সম্পর্কে যদি
আপনাদের আরো কোন কিছু জানার থাকে তাহলে অবশ্যই আমাদেরকে জিজ্ঞাসা করতে পারেন।
আমরা যত দ্রুত সম্ভব আপনাদের সকল প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করব।
''ধন্যবাদ''
দ্যা বর্ষা ওয়েব সাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url