টিবি রোগের ঔষধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া গুলো জেনে নিন

কিডনি রোগের কারণ লক্ষণ ও প্রতিকারআপনি কি টিবি রোগে আক্রান্ত? টিবি রোগের কারণে ঔষধ খাচ্ছেন আর সেই কারণে চিন্তিত যে টিবি রোগের ঔষধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া কি? যদি এমনটা হয় তাহলে চিন্তিত না হয়ে সাবধান হন। আর সাবধান হওয়ার জন্য আমাদের লেখা আর্টিকেল টিবি রোগের ঔষধের প্রতিক্রিয়া পড়ুন। কারণ আমরা আমাদের আর্টিকেল টিবি রোগের ঔষধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া এর ভেতর টিবি রোগের ঔষধের নাম সহ বিভিন্ন তথ্য তুলে ধরেছি।
টিবি রোগের ঔষধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া
টিবি রোগ সম্পর্কে সঠিক এবং বিভিন্ন রকম গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পেতে চাইলে আপনাদেরকে টিবি রোগের ঔষধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে পড়তে হবে। এই আর্টিকেলে এমন কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য রয়েছে যা আপনাদের জন্য অনেক বেশি উপকারী।

টিবি রোগ কি

টিবি রোগ কি? কমবেশি আমরা সকলেই জানি টিবি রোগের আরেকটি অতি পরিচিত নাম রয়েছে যক্ষ্মা। সাধারণ মানুষের কাছে টিবি নামের চেয়ে যক্ষ্মা নামটি বেশি পরিচিত। যক্ষ্মা আর টিবি একই রোগ শুধুমাত্র ভিন্ন। কারো কাছে এটি টিবি নামে পরিচিত এবং কারো কাছে পরিচিত যক্ষ্মা নামে। 
টিবি হচ্ছে এক ধরনের সংক্রামক রোগ। যা সৃষ্টি হয়ে থাকে এক ধরনের টিউবারকল ব্যাসিলাস দ্বারা। এই রোগের ব্যাকটেরিয়া আমাদের শরীরে প্রবেশ করে শরীরের বিভিন্ন অংশে ব্যবহার ভাবে ছড়িয়ে পড়ে। আগে টিবি একটি ভয়ঙ্কর রোগ হলেও বর্তমান সময়ে এটি একটি নিরাময় যোগ্য রোগে পরিণত হয়েছে। 

অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহারের মাধ্যমে এই রোগ থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব। আর সেই কারণেই তো বর্তমান সময়ে একটি পরিচিত শ্লোগান হচ্ছে '' যক্ষ্মা হলে রক্ষা নাই এই কথাটির ভিত্তি নাই''।

টিবি রোগ কেন হয়

টিবি এক ধরনের ব্যাকটেরিয়া জনিত রোগ যা একজনের শরীর থেকে আরেকজনের শরীরে ছড়িয়ে পড়তে পারে। আর এটি ছড়িয়ে পড়ার সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম হচ্ছে বাতাস। টিবি রোগ যেই ব্যাকটেরিয়া দ্বারা ছড়ায় তাকে বলা হয় মাইকোব্যাকটোরিয়াম টিউবারকিউলোসিস। 
এই ব্যাকটেরিয়াতে আক্রান্ত ব্যক্তির হাঁচি কাশি এর মাধ্যমে অন্য ব্যক্তি টিবি রোগে আক্রান্ত হয়ে থাকেন। টিবি রোগ নিঃশ্বাসের মাধ্যমে একজনের শরীর থেকে অন্যজনের শরীরে ছড়ায়। টিবি রোগের ব্যাকটেরিয়া আমাদের শরীরে প্রবেশ করে ফুসফুসের ক্ষতি করে। টিবি রোগের ব্যাকটেরিয়া সবথেকে বেশি আক্রান্ত করে আমাদের শরীরের যে অংশে রক্ত এবং অক্সিজেন বেশি রয়েছে। 

টিবি রোগের ব্যাকটেরিয়া শরীরে প্রবেশ করলেই যে কোন ব্যক্তি টিবি রোগে আক্রান্ত হবে তা কিন্তু নয়। কারো কারো ক্ষেত্রে এই ব্যাকটেরিয়া শরীরে প্রবেশ করার পরও সেই ব্যক্তি টিবি রোগে আক্রান্ত নাও হতে পারে। এর প্রধান কারণ হচ্ছে সেই ব্যক্তির শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বেশি থাকা।

টিবি রোগ কত প্রকার

একজন ব্যক্তি যখন টিবি রোগে আক্রান্ত হয় তখন সেই ব্যক্তি শুধুমাত্র এক ধরনের টিবিতে আক্রান্ত হয় তা কিন্তু নয়। একজন ব্যক্তি বিভিন্ন ধরনের টিবিতে আক্রান্ত হতে পারে। কিন্তু সেই বিষয়ে আমরা অনেকেই জানিনা। 

কারণ এ বিষয়ে সম্পূর্ণ ধারণা আমাদের অনেকের নেই। আর তাইতো আমরা আমাদের আর্টিকেলের এই অংশে আপনাদের সামনে টিবি রোগ কত প্রকার তা আলোচনা করেছি। কোন ব্যক্তি যদি টিবি রোগে আক্রান্ত হয় তাহলে যেন খুব সহজেই বুঝতে পারেন সেই ব্যক্তি কোন ধরনের টিবি রোগে আক্রান্ত হয়েছে।

কোন ব্যক্তির শরীরে সাধারণত দুই ধরনের টিবি রোগ দেখা যায়। যেমনঃ সুপ্ত টিবি এবং সক্রিয় টিবি । এছাড়াও ব্যক্তির শরীরে চার ধরনের টিবি দেখা দিতে পারে। যেমনঃ পালমোনারি টিবি ,এক্সট্রা পালমোনারি টিবি , সুপ্ত টিবি এবং সক্রিয় টিবি ।

পালমোনারি টিবিঃ এই টিবি কে বলা হয়ে থাকে টিবি রোগের প্রাথমিক পর্যায়। কোন ব্যক্তি যখন পালমোনারি টিবি তে আক্রান্ত হয় তখন সেই ব্যক্তির ফুসফুসে আক্রমণ করে আর সেই কারণে সেই ব্যক্তির দীর্ঘদিন ধরে কাশির সমস্যা দেখা দেয়।

এক্সট্রা পালমোনারি টিবিঃ কোন ব্যক্তি যখন এক্সট্রা পালমোনারি টিবি তে আক্রান্ত হয় তখন সেই ব্যক্তির টিবির ব্যাকটেরিয়া ফুসফুস থেকে শরীরের বিভিন্ন অংশে ছড়িয়ে পড়ে।

সুপ্ত টিবিঃ সুপ্ত টিবি এই কথাটি শুনেই আমরা বুঝতে পারছি যে কোন কিছু সুপ্ত অবস্থায় থাকা অথবা লুকায়িত থাকা। কোন ব্যক্তি সুপ্ত টিবি তে আক্রান্ত হয়েছে বলার প্রধান কারণ হচ্ছে। 

টিবি রোগের ব্যাকটেরিয়া মানুষের শরীরে প্রবেশ করে কিন্তু সেই ব্যক্তির শরীরে উপস্থিত থাকা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা সেই ব্যাকটেরিয়ার সাথে লড়াই করে সেই ব্যাকটেরিয়াকে সক্রিয় হতে দেয় না আর সেই কারণে টিবি রোগের কোনরকম লক্ষণ প্রকাশ পায় না তখন বলা হবে সেই ব্যক্তি সুপ্ত টিবি রোগে আক্রান্ত হয়েছে।

সক্রিয় টিবিঃ যখন কোন ব্যক্তির শরীরে টিবি রোগের ব্যাকটেরিয়া প্রবেশ করে এবং প্রবেশ করার পর সেই ব্যাকটেরিয়া শরীরের বিভিন্ন অংশে ছড়িয়ে পড়ে শরীরকে আক্রান্ত করে। সে ব্যক্তি টিবি রোগে আক্রান্ত হওয়ার কারণে বিভিন্ন রকম লক্ষণ প্রকাশ পায় তখন সেই ব্যক্তি সক্রিয় টিবি রোগে আক্রান্ত হয়।

টিবি রোগ কি ছোঁয়াচে?

আমাদের আশেপাশে যখন কোন ব্যক্তি টিবি রোগে আক্রান্ত হয় তখন আমাদের মনে প্রশ্ন জাগে টিবি রোগ কি ছোঁয়াচে? আর আমরা এই প্রশ্নের উত্তর আপনাদের সামনে তুলে ধরেছি। টিবি এক ধরনের ছোঁয়াচে রোগ। কেন টিবি ছোঁয়াচে রোগ তা জেনে নিন। 

টিবি এক ধরনের ছোঁয়াচে রোগ বলার প্রধান কারণ হচ্ছে যে টিবি এমন এক ধরনের রোগ যা খুব সহজেই বাতাসের মাধ্যমে একজনের শরীর থেকে অন্যজনের শরীরে প্রবেশ করে। যখন কোন ব্যক্তি টিবি রোগে আক্রান্ত হয় তখন সেই ব্যক্তির হাঁচি কিংবা কাশির মাধ্যমে অন্য ব্যক্তি আক্রান্ত হতে পারে। 

দেখা যায় যে একজন ব্যক্তি যখন টিবি রোগে আক্রান্ত হয় তখন বিভিন্ন কারণে বাইরে যাই আর বাইরে গিয়ে থুতু কিংবা কফ বাইরে ফেলে। অনেক সময় কিংবা কফ ছায়াযুক্ত স্থানে ফেলে। আর ছায়াযুক্ত স্থানে থাকার কারণে সেই থুতু এবং কফে থাকা ব্যাকটেরিয়া দীর্ঘদিন যাবত বেঁচে থাকে। 

যখন কোন ব্যক্তি সেই থুতু কিংবা কফের সংস্পর্শে আসে তখন সেই ব্যক্তিও টিবি রোগ কি ছোঁয়াচেরোগে আক্রান্ত হতে পারে। উপরের বর্ণনা শুনে নিশ্চয়ই আপনারা বুঝতে পেরেছেন যে টিবি রোগ এক ধরনের ছোঁয়াচে রোগ।

টিবি রোগের ঔষধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া

টিবি রোগের ঔষধ খাওয়ার কারণে বিভিন্ন রকম পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে। কিন্তু বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই কোনরকম পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দেয় না। কারো কারো ক্ষেত্রে শুধুমাত্র পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। 

পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দিলেও বড় ধরনের কোন রকম পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দেয় না। ছোট ছোট বিভিন্ন রকম পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে। আম রা নিচে আপনাদের জানার সুবিধার্থে টিবি রোগের ঔষধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া গুলো আলোচনা করলাম।
  • টিবি রোগের ঔষধের সবথেকে বড় পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হচ্ছে প্রসাবের রং পরিবর্তন হওয়া। কারো কারো ক্ষেত্রে প্রসাবের রং লাল অথবা কমলা হতে পারে। এক্ষেত্রে ভয় পাওয়ার কিছু নেই। এটি হওয়ার কারণ হচ্ছে ওষধ খাওয়া। ঔষধ খাওয়া বন্ধ করে দিলে প্রসাবের রং স্বাভাবিক হয়ে যাবে।
  • কখনো কখনো শরীরের ঘাম কিংবা চোখের পানি ও কমলা কালার হতে পারে।কারো কারো ক্ষেত্রে দেখা যায় যে শরীরে বিভিন্ন রকম র‍্যাশ দেখা দিচ্ছে আর সেই কারণে চুলকানি হচ্ছে।
  • শরীরের বিভিন্ন অংশের জয়েন্টে ব্যথা দেখা দিতে পারে।
  • কারো কারো ক্ষেত্রে ক্ষুধামন্দা দেখা দেয়।
  • টিবি রোগের ঔষধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া আরেকটি হচ্ছে পেট ব্যথা হতে পারে।
  • কারো কারো ক্ষেত্রে শরীরের জ্বালাপোড়া দেখা দেয়।
উপরের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া গুলো দেখা দিলে তেমন চিন্তার বিষয় নয় সাধারণ কিছু ঔষধ খেলেই এই সকল পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব। কিন্তু অবশ্যই পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া গুলো যদি মাত্রাতিরিক্ত হয় কিংবা বড় ধরনের কোন পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দেয় তাহলে অবশ্যই চিকিৎসকের নিকট গিয়ে পরামর্শ নিতে হবে।

টিবি রোগের ঔষধ খাওয়ার নিয়ম?

টিবি রোগের ঔষধ খাওয়ার নিয়ম প্রথম পর্যায়ের দিকে সাধারণত মুখে খাওয়া যায় কিন্তু যদি রোগ অতি বেড়ে যায় তাহলে তার শিরার মাধ্যমে দেওয়া হয়ে থাকে। টিবি রোগের ঔষধ খাওয়া শুরু করলে অবশ্যই এর ডোজ শেষ করতে হয়। 

যদি টিবি রোগের ঔষধ খাওয়া শুরু করার পরে শরীর একটু সুস্থ হলে ডোজ কমপ্লিট করার পূর্বে ঔষধ বন্ধ করে দেন তাহলে এটি শরীরের জন্য ক্ষতিকারক হতে পারে। তাই কখনোই টিবি রোগের ওষধের ডোজ কমপ্লিট না করে ঔষধ খাওয়া বন্ধ করা যাবে না। টিবি রোগের ঔষধ প্রতিদিন একই সময়ে নির্দিষ্ট নির্দেশ অনুসারে গ্রহণ করতে হয়।

টিবি রোগের ঔষধ কত দিন খেতে হয়?

আমরা আমাদের আর্টিকেলের এই অংশে আপনাদের সামনে টিবি রোগের ঔষধ কত দিন খেতে হয় সেই সম্পর্কে আলোচনা করব। কোন ব্যক্তি যখন টিবি রোগের ঔষধ খাওয়া শুরু করেন তখন ঔষধ খাওয়ার দুই থেকে তিন সপ্তাহ পরেই এর কার্যকারিতা লক্ষ্য করা যাবে। দুই থেকে তিন সপ্তাহ পর যদি শরীর ভালো অনুভব হয় তাহলেও ঔষধ বন্ধ করা যাবে না। 

এর একটি নির্দিষ্ট ডোজ থাকে সেই ডোজ কমপ্লিট না করা পর্যন্ত আপনাকে ওষুধ খাওয়া চালিয়ে যেতে হবে। সাধারণত টিবি রোগের ঔষধের ডোজ ৬ মাস পর্যন্ত খেতে হয়। চিকিৎসক আপনাকে যতদিন ঔষধ খাওয়ার পরামর্শ দিবে অবশ্যই ততদিন পর্যন্ত ঔষধ খাওয়া চালিয়ে যেতে হবে।

পরামর্শমূলক কথা

আশা করছি আপনারা টিবি রোগের ঔষধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া আর্টিকেলটি পড়ে টিবি রোগ সম্পর্কে বিভিন্ন রকম তথ্য জানতে পেরেছেন। আমাদের সমাজে এখনো অনেক ব্যক্তি রয়েছেন যারা টিবি রোগ হলে মনে করেন যে তিনি মৃত্যুবরণ করবেন। 

আর সেই কারণে অনেক বেশি চিন্তিত হয়ে পড়ে। আমরা আপনাদের পরামর্শ দিব যে টিবি রোগ হলে চিন্তিত না হয়ে সচেতন হোন। টিবি রোগ যেহেতু এক ধরনের ছোঁয়াচে রোগ তাই যদি পরিবারের কোন ব্যক্তি টিবি রোগে আক্রান্ত হয় তাহলে একটু সতর্কতা অবলম্বন করুন কিন্তু অবহেলা নয়। 

টিবি রোগ সম্পর্কে আপনাদের আরো কিছু জানার থাকলে কমেন্টের মাধ্যমে আমাদেরকে জিজ্ঞাসা করতে পারেন।

''ধন্যবাদ''

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

দ্যা বর্ষা ওয়েব সাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url