হিমোগ্লোবিন কত হলে রক্ত দিতে হয় জেনে নিন

রক্তে হিমোগ্লোবিন বৃদ্ধির ঔষধের নামআজকে আমাদের আর্টিকেলের বিষয় হচ্ছে হিমোগ্লোবিন কত হলে রক্ত দিতে হয় গর্ভাবস্থায় কম বেশি প্রতিটি মহিলার একটি প্রধান সমস্যা হিসেবে দাঁড়াই শরীরে হিমোগ্লোবিন এর মাত্রা কমে যাওয়া। আর সেই কারণে চিকিৎসকগণ গর্ভবতী মায়েদেরকে শিশু প্রসবের পূর্বেই শরীরে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা বৃদ্ধি করার পরামর্শ দিয়ে থাকেন। প্রতিটি মানুষের শরীরে একটি নির্দিষ্ট রক্তের পরিমাণ থাকে। আর সেই পরিমাণ কমে গেলেই দেখা দেয় সমস্যা। আপনি কি জানেন হিমোগ্লোবিন কত হলে রক্ত দিতে হয়। অনেকেই হয়তো জানেন না আমাদের শরীরে হিমোগ্লোবিন কত হলে রক্ত দিতে হয়।
হিমোগ্লোবিন কত হলে রক্ত দিতে হয়
আর সেই কারণে আমরা আমাদের আর্টিকেল দ্বারা এই তথ্য আপনাদের মাঝে পৌঁছে দেওয়ার চেষ্টা করেছি। যাতে করে আপনারা খুব সহজে বুঝতে পারেন যে আপনার শরীরের রক্তের পরিমাণ কতটুকু রয়েছে সেটি আপনার শরীরের জন্য ভালো নাকি খারাপ।

ভূমিকাঃ হিমোগ্লোবিন কত হলে রক্ত দিতে হয়

হিমোগ্লোবিন আমাদের শরীরের একটি অংশ। যেটির ঘাটটির ফলে দেখা দেয় বিভিন্ন রকম সমস্যা। হিমোগ্লোবিন কমে যাওয়ার সমস্যা নারীদের হয়ে থাকে আবার পুরুষদের ক্ষেত্রেও দেখা যায়। কিন্তু বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই হিমোগ্লোবিন কমে যাওয়ার সমস্যার মুখোমুখি হয়ে থাকেন নারীরা। 
কেননা প্রাকৃতিকগতভাবেই নারীদের প্রতি মাসে মাসিক এর মাধ্যমে শরীর থেকে কিছু পরিমাণ রক্ত নিঃসৃত হয়। তাই নারীদের প্রয়োজন হয় সেই রক্তের ঘাটতি পূরণ করার। সঠিক বিশ্রাম এবং সঠিক খাবার খাওয়ার। কিন্তু পুরুষদের ক্ষেত্রে এইরকম হয় না। 

বরং দেখা গেছে যে পুরুষরা একটি নির্দিষ্ট সময় পরপর কিছু রক্ত দান করতেও পারবে এতে তাদের কোনরকম সমস্যা হবে না। নারীদের মধ্যেও যে সকল নারী গর্ভবতী সে সকল নারীদের শরীরে হিমোগ্লোবিন কমে যাওয়ার সমস্যা বেশি দেখা দেয়। 

কেননা গর্ভকালীন সময়ে একজন নারীর শরীরে বেড়ে ওঠে আরেকটি প্রাণ। আর সেই প্রাণের ও দরকার হয় রক্ত। তাই মায়ের শরীর থেকে সেই রক্ত যাই শিশুর শরীরে। তখনই দেখা দেয় সেই গর্ভবতী মায়ের শরীরে হিমোগ্লোবিন এর ঘাটতি। 

অনেক সময় দেখা যায় যে আমরা চিকিৎসকের কাছে গেলে চিকিৎসক রক্ত পরীক্ষা করার মাধ্যমে বুঝতে পারেন শরীরে কতটুকু হিমোগ্লোবিনের ঘাটতি রয়েছে। আমাদের কে বলেন শরীরে হিমোগ্লোবিন কম রয়েছে হিমোগ্লোবিন বৃদ্ধি করার খাবার খেতে। 
যদি হিমোগ্লোবিন বৃদ্ধি না পাই তাহলে গর্ভবতী মায়ের শরীরে রক্ত দিতে হয়। আমরা হয়তো অনেকেই জানিনা হিমোগ্লোবিন কত হলে রক্ত দিতে হয়। আর তাইতো এই বিষয়ে আমরা আমাদের আর্টিকেলের নিচের অংশে বিস্তারিতভাবে আলোচনা করব। 

আপনারা এই আলোচনা পড়ে অবশ্যই বুঝতে পারবেন যে আপনারা কিভাবে বুঝবেন আপনার শরীরে হিমোগ্লোবিনের ঘাটতি রয়েছে কিনা এবং আপনার শরীরে রক্ত দিতে হবে কিনা।

হিমোগ্লোবিন কত হলে রক্ত দিতে হয়

প্রতিটি মানুষের শরীরে রক্তের একটি নির্দিষ্ট মাত্রা রয়েছে। যখন আমাদের শরীরে সে নির্দিষ্ট পরিমাণ রক্ত উপস্থিত থাকবে তখন কোনোরকম সমস্যা দেখা দেবে না কিন্তু কোন কারণে যদি আমাদের শরীরে রক্তের পরিমাণ কমে যায় তাহলেই দেখা দেয় বিভিন্ন রকম সমস্যা। 
আর সেই কারণেই চিকিৎসকগণ সাধারণ মানুষকে সব সময় পুষ্টিকর খাবার খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকেন। কারণ রক্তবৃদ্ধি করার একটি গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম হচ্ছে খাবার। আমাদের আশেপাশে এমন অনেক রকম খাবার রয়েছে যে সকল খাবার খেলে আমাদের শরীরের রক্ত বৃদ্ধি পায়। 

কিন্তু যদি কারো ক্ষেত্রে খাবার খাওয়ার পরেও শরীরে রক্তের ঘাটতি দেখা যায় তাহলে তখন সেই ব্যক্তির ক্ষেত্রে পরামর্শ দেয় রক্ত দেওয়ার। আবার কিছু কিছু রোগ এমন রয়েছে যে সকল রোগের কারণে একজন মানুষের শরীরে প্রতি বছরে রক্ত প্রদান করতে হয়। 

একজন প্রাপ্তবয়স্ক মহিলার শরীরে হিমোগ্লোবিন এর সঠিক মাত্রা হচ্ছে ১২ থেকে ১৫.৫ গ্রাম/ডি এল। আর একজন প্রাপ্ত বয়স্ক পুরুষের ক্ষেত্রে শরীরে হিমোগ্লোবিন এর সঠিক মাত্রা হচ্ছে ১৩.৫ থেকে ১৭.৫ গ্রাম/ডিএল। 

আর যখন কোন নারী অথবা পুরুষের শরীরে এর থেকে কম পরিমাণ হিমোগ্লোবিন থাকে তখন সেই ব্যক্তির শরীরে রক্ত দিতে হয়। আশা করছি আপনারা উপরোক্ত আলোচনাটি পড়ে অবশ্যই বুঝতে পেরেছেন হিমোগ্লোবিন কত হলে রক্ত দিতে হয়।

গর্ভাবস্থায় হিমোগ্লোবিন কত থাকা দরকার

গর্ভাবস্থায় নারীদের একটি প্রধান সমস্যা হয়ে দাঁড়ায় শরীরে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা কমে যাওয়া। আর এই সমস্যার সম্মুখীন প্রায় কমবেশি সকল মহিলাই হয়ে থাকেন। কারো কারো ক্ষেত্রে দেখা যায় বাচ্চা প্রসবের পূর্বে বিভিন্ন রকম ঔষধ এবং বিভিন্ন রকম খাবার খেয়ে শরীরে হিমোগ্লোবিন এর ঘাটতি পূরণ হয়ে যায়। 

আবার কারো কারো ক্ষেত্রে এই ঘাটতি পূরণ হয় না তার ফলে সেই গর্ভবতী মহিলাকে রক্ত দেওয়ার প্রয়োজন হয়। কিন্তু আমাদের মতে বাইরে থেকে রক্ত দেওয়ার থেকে বেশি ভালো হচ্ছে নিজের শরীরেই রক্ত তৈরি করা। 

আপনি যদি গর্ভবতী মহিলা হয়ে থাকেন তাহলে অবশ্যই প্রথম দিক থেকেই আপনাকে এইদিকে একটু বিশেষ নজর দিতে হবে। যেন বাচ্চা প্রসবের পর শরীরে রক্তের ঘাটতি না দেখা দেয়। একজন প্রাপ্তবয়স্ক মহিলার শরীরে যখন ১২ থেকে ১৫ গ্রাম/ডিএল রক্ত থাকে তখন বলা হয় সেই মহিলার শরীরে সঠিক পরিমাণ রক্ত রয়েছে।

 কিন্তু একজন গর্ভবতী মহিলার ক্ষেত্রে দেখা যায় যে যদি কোন গর্ভবতী মহিলার শরীরে ১১ গ্রাম/ডি এল এর বেশি রক্ত থাকে তাহলেই তাকে স্বাভাবিক ধরা হয়ে থাকে। যদি এর থেকে কম থাকে তাহলে বলা হয় যে শরীরে রক্তের ঘাটতি রয়েছে।

গর্ভাবস্থায় হিমোগ্লোবিন বাড়ে কোন খাবারে

আমাদের আশেপাশে বেশ কিছু খাবার রয়েছে যে সকল খাবার সঠিক পরিমাণে খেলে আমাদের শরীরে কখনোই হিমোগ্লোবিন এর ঘাটতি দেখা যাবে না। অর্থাৎ সে সকল খাবার খাওয়ার কারণে আমাদের শরীরে হিমোগ্লোবিনের পরিমাণ সঠিক থাকবে। 

এখন আমরা আমাদের আর্টিকেলের এই অংশে আপনাদের সাথে আলোচনা করব গর্ভাবস্থায় হিমোগ্লোবিন বাড়ে কোন কোন খাবার খেলে।

প্রাণীজ জাতীয় খাদ্যঃ যে সকল খাবারে প্রাণীজ পদার্থ উপস্থিত রয়েছেন সেই সকল খাবার আমাদের শরীরে হিমোগ্লোবিন তৈরি করতে অনেক বেশি সাহায্য করে। যেমনঃ কলিজা, দুধ, ডিম, মাংস ইত্যাদি। গর্ভাবস্থায় এই সকল খাবার খেলে শরীরে হিমোগ্লোবিন এর পরিমাণ বৃদ্ধি হবে এবং রক্তস্বল্পতা দেখা দেবে না।

সামুদ্রিক মাছঃ আমরা মাছ ভাতে বাঙালি। ভাতের সাথে এক টুকরো মাছ পেলেই আর কোন কিছু প্রয়োজন পড়ে না। কিছু কিছু মাছ রয়েছে যে সকল মাছ আমাদের শরীরে হিমোগ্লোবিন তৈরি করতে অনেক বেশি সাহায্য করে। তাই বলে সব ধরনের মাছ নয়। 

যেই সকল মাছ সমুদ্রে পাওয়া যায় বলতে গেলে সামুদ্রিক মাছ। তাই গর্ভাবস্থায় যদি কোন মহিলা সামুদ্রিক মাছ খায় তাহলে তার রক্তস্বল্পতার সমস্যা অনেকটাই কমে যাবে।

রঙিন শাক সবজি ও ফলমূলঃ কিছু কিছু ফল রয়েছে যেই সকল ফলে উপস্থিত রয়েছে প্রচুর পরিমাণে আয়রন এবং ক্যালসিয়াম। যা আমাদের শরীরে হিমোগ্লোবিন তৈরি করতে সবথেকে বেশি কার্যকরী। 

তাই যদি মনে হয় যে শরীরে রক্তের পরিমাণ কম হতে পারে অথবা রক্তের স্বল্পতার কারণে বিভিন্ন রকম লক্ষণ প্রকাশ পায় তাহলে এই সকল ফল অথবা শাকসবজি খেতে পারেন। যেমনঃ আপেল,বিটরুট, ডালিম ইত্যাদি। নিয়মিত এই সকল ফল খেলে শরীরে রক্তস্বল্পতার ঘাটতি কমে আসবে।

ভিটামিন সি জাতীয় খাবারঃ আমাদের শরীরে ভিটামিন সি এর অভাবেও হিমোগ্লোবিন কমতে শুরু করে। যখন কোন ব্যক্তির শরীরে ভিটামিন সি এর ঘাটতি দেখা দেবে তার শরীর থেকে আস্তে আস্তে হিমোগ্লোবিন এর পরিমাণ কমে যেতে পারে। 

তাই হিমোগ্লোবিন কমে যাওয়ার সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে নিয়মিত ভিটামিন সি জাতীয় খাবার খেতে হবে। এতে করে গর্ভবতী মায়ের রক্তস্বল্পতা দেখা দেবে না।

ফলিক অ্যাসিড জাতীয় খাবারঃ যে সকল খাবারে ফলিক অ্যাসিড রয়েছে সেই সকল খাবার আমাদের শরীরে হিমোগ্লোবিন তৈরি করতে সাহায্য করে। কারণ ফলিক অ্যাসিডকে বলা হয়ে থাকে ভিটামিন বি কমপ্লিট যা আমাদের শরীরের রক্ত তৈরিতে অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ ভিটামিন হিসাবে কাজ করে।

রক্তে হিমোগ্লোবিন কমে গেলে কি সমস্যা হয়

কোন ব্যক্তির রক্তে যদি হিমোগ্লোবিন এর মাত্রা কমে যায় তাহলে সেই ব্যক্তির বিভিন্ন রকম লক্ষণ প্রকাশ পাই। আর সেই সকল লক্ষণ দেখে খুব সহজেই বোঝা যায় যে সেই ব্যক্তির শরীরে রক্তস্বল্পতা দেখা দিয়েছে। কিন্তু সে সকল লক্ষণ যে একেবারে তীব্র আকারে দেখা দিবে তা নাও হতে পারে। 

মৃদু আকারেও প্রকাশ পেতে পারে। তাই অনেক সময় অনেকেই ঠিকঠাক ভাবে বুঝতেও পারে না যে তার শরীরে রক্তস্বল্পতা দেখা দিয়েছে। আর তাইতো আমরা এখন আপনাদের সামনে তুলে ধরব রক্তের হিমোগ্লোবিন কমে গেলে কি সমস্যা হয়। নিম্নোক্ত আলোচনা করা হলোঃ
  • রক্তে হিমোগ্লোবিনের পরিমাণ কমে গেলে বুকে ব্যথা হতে পারে। সেই ব্যথা হতে পারে মৃদু অথবা তীব্র।
  • অনেক সময় দেখা যায় যে ঠোঁটের কোনাই হালকা হালকা কত অথবা ঘা হচ্ছে এমনটি হওয়ার কারণ রক্তে হিমোগ্লোবিনের পরিমাণ কম হওয়া।
  • কারো কারো ক্ষেত্রে দেখা যায় যে রক্তে হিমোগ্লোবিন এর পরিমাণ কমে গেলে শ্বাস-নিঃশ্বাসের সমস্যা হচ্ছে।
  • রক্তে হিমোগ্লোবিন এর পরিমাণ কমে যাওয়ার কারণে হাত এবং পা ঠান্ডা হয়ে যেতে পারে।
  • হৃদপিন্ড এর স্পন্দন বৃদ্ধি পাওয়া রক্তে হিমোগ্লোবিনের পরিমাণ কমে যাওয়ার একটি সমস্যা।
  • রক্তে হিমোগ্লোবিন এর পরিমাণ কমে যাওয়ার কারণে ঘা দেখা দিতে পারে।
  • রক্তে হিমোগ্লোবিন এর পরিমাণ কমে যাওয়ার আরেকটি প্রধান সমস্যা হচ্ছে শারীরিক দুর্বলতা এবং ক্লান্তি ভাব।
  • যখন কোন ব্যক্তির রক্তে হিমোগ্লোবিন এর পরিমাণ কমে যায় তখন তার মাথা ঘোরে এবং মেজাজ খিটখিটে হয়ে যেতে পারে।

লেখকের মন্তব্য

নিশ্চয়ই আপনারা হিমোগ্লোবিন কত হলে রক্ত দিতে হয় আর্টিকেলটি পড়ে আমাদের শরীরে কতটুকু পরিমাণ রক্ত থাকলে তাকে স্বাভাবিক বলা হবে আর কতটুকু রক্ত থাকলে শরীরে রক্ত প্রদান করতে হবে সেই সম্পর্কে জানতে পেরেছেন। 

আপনার রক্তে যদি হিমোগ্লোবিন এর পরিমাণ কম থাকে তাহলে তা বৃদ্ধি করার জন্য বিভিন্ন রকম খাবার রয়েছে সেই সকল খাবার খেতে পারেন অথবা এখন বাজারে বিভিন্ন রকম ঔষধ এবং ইনজেকশন পাওয়া যায় সেই পদ্ধতিতেও শরীরে রক্তস্বল্পতা কমানো সম্ভব। অনেকেই বাইরে থেকে রক্ত প্রদান করে। 

কিন্তু আমাদের মতে বাইরে থেকে রক্ত কিনে শরীরে দেয়া শরীরের জন্য খুব একটা সুবিধা জনক নয়। তাই বাইরে থেকে রক্ত কিনে দেওয়ার পূর্বে অবশ্যই ভালোভাবে যাচাই-বাছাই করে তারপর দেবেন। শরীরে হিমোগ্লোবিন সম্পর্কে যদি আপনাদের আরো কোন প্রশ্ন থাকে তাহলে আমাদেরকে কমেন্টের মাধ্যমে জিজ্ঞাসা করতে পারেন।

''ধন্যবাদ''

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

দ্যা বর্ষা ওয়েব সাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url