বাংলাদেশের প্রাকৃতিক দুর্যোগ রচনা ২০ পয়েন্ট

সামনেই পরীক্ষা আর অনেক পরীক্ষাতেই বাংলাদেশের প্রাকৃতিক দুর্যোগ রচনা এসে থাকে। আর সে কারণেই আজকে আমরা আপনাদের জন্য বাংলাদেশের প্রাকৃতিক দুর্যোগ রচনা নিয়ে কিছু পয়েন্ট আলোচনা করেছি। যে সকল পয়েন্ট করার মাধ্যমে আপনারা বাংলাদেশের প্রাকৃতিক দুর্যোগ সম্পর্কে সম্পূর্ণ ধারণা পাবেন। বাংলাদেশের আবহাওয়ার কারণে বাংলাদেশে বিভিন্ন রকম প্রাকৃতিক দুর্যোগ দেখা দিয়ে থাকে। তাই আমাদের সকলের উচিত বাংলাদেশের প্রাকৃতিক দুর্যোগ সম্পর্কে জানা এবং সচেতন থাকা।
বাংলাদেশের প্রাকৃতিক দুর্যোগ রচনা


তাই এখন দেরি না করে বাংলাদেশের প্রাকৃতিক দুর্যোগ রচনা সম্পর্কে কিছু আলোচনা করি। যার সাহায্যে আপনারা বাংলাদেশের প্রাকৃতিক দুর্যোগ কিভাবে মোকাবেলা করবেন সম্পর্কেও জানতে পারবেন।

ভূমিকাঃ বাংলাদেশের প্রাকৃতিক দুর্যোগ রচনা

বাংলাদেশ ষড়ঋতুর দেশ। বাংলাদেশের ছয়টি ঋতুর ছয়টি রূপ দেখা যায়। প্রতিটি রূপের রয়েছে আলাদা আলাদা সৌন্দর্য এবং বৈশিষ্ট্য। আর এই ছয়টি ঋতু পরিবর্তন হওয়ার সাথে সাথে আমাদের দেশে বয়ে নিয়ে আসে বিভিন্ন রকম প্রাকৃতিক দুর্যোগ।

যে সকল প্রাকৃতিক দুর্যোগ মাত্রাতিরিক্ত রূপ ধারণ করলে বাংলাদেশের বিভিন্ন রকম ক্ষতি হয়ে থাকে। আর এর পাশাপাশি বিভিন্ন প্রাণহানি ও দেখা দেয়। কিছু কিছু প্রাকৃতিক দুর্যোগ রয়েছে যে সকল প্রাকৃতিক দুর্যোগের মোকাবেলা করার জন্য পূর্ব প্রস্তুতি নেওয়া যায়।

কিন্তু কিছু কিছু প্রাকৃতিক দুর্যোগ রয়েছে যে সকল দুর্যোগ হঠাৎ আসে আর সেই কারণে সেই সকল প্রাকৃতিক দুর্যোগের সাথে মোকাবেলা করার কোন রকম পূর্ব প্রস্তুতি নেওয়া সম্ভব হয় না। আর সেই কারণে সেই সকল প্রাকৃতিক দুর্যোগে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ ও বেশি লক্ষ্য করা যায়।

প্রাকৃতিক দুর্যোগ বলতে কী বোঝায়

প্রাকৃতিক দুর্যোগ এই কথাটি আমরা সকলেই শুনেছি বিভিন্ন সময়। কিন্তু আসলেই প্রাকৃতিক দুর্যোগ বলতে কী বোঝায়। প্রাকৃতিক দুর্যোগ শুধুমাত্র প্রাকৃতিকভাবেই সৃষ্টি হয়ে থাকে। মানুষের সাধারণ জীবন যাত্রায় যখন প্রাকৃতিকভাবে কোন দুর্যোগ এসে ক্ষয়ক্ষতি করে দিয়ে যাই তখন তাকে প্রাকৃতিক দুর্যোগ বলা হয়ে থাকে। 

বাংলাদেশে বিভিন্ন রকম প্রাকৃতিক দুর্যোগ দেখা দিয়ে থাকে। যেমনঃ খরা, ঘূর্ণিঝড়, বন্যা, ভূমিকম্প, জলোচ্ছ্বাস, সাইক্লোন ইত্যাদি। উপরে উল্লেখিত প্রাকৃতিক দুর্যোগগুলো বাংলাদেশে প্রায় প্রতি বছরই দেখা দিয়ে থাকে। আর এই ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে বাংলাদেশ বিভিন্ন রকম ক্ষতির সম্মুখীন হয়ে থাকে।

বাংলাদেশের প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণ

আমরা সকলেই জানি বাংলাদেশে বিভিন্ন রকমের প্রাকৃতিক দুর্যোগ হয়ে থাকে। কিন্তু এই সকল প্রাকৃতিক দুর্যোগ কি এমনি এমনি হয়। হয়তো আপনার মনেও এই প্রশ্ন জাগতে পারে। আর এই প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার জন্যই আমরা বাংলাদেশের প্রাকৃতিক দুর্যোগ রচনা আর্টিকেলের সাহায্যে তুলে ধরার চেষ্টা করেছি। 

বাংলাদেশের এইরকম প্রাকৃতিক দুর্যোগ হওয়ার বেশ কিছু কারণ রয়েছে। আর সে সকল কারণেই প্রাকৃতিক দুর্যোগ দেখা দিয়ে থাকে। প্রাকৃতিক দুর্যোগ দেখা দেওয়ার কারণগুলোর মধ্যে বেশ কিছু কারণ হচ্ছেঃ

মৌসুমী বায়ুর প্রভাবঃ বাংলাদেশের একটি প্রাকৃতিক দুর্যোগ হচ্ছে বন্যা। আর এই বন্যার প্রধান কারণ হচ্ছে মৌসুমী বায়ুর প্রভাব। বাংলাদেশের ছয় ঋতুর মধ্যে একটি হচ্ছে বর্ষা কাল। 

এই সময় মৌসুমী বায়ু দক্ষিণ পূর্ব দিক থেকে উত্তর-পশ্চিম দিকে প্রবাহিত হয়ে থাকে আর সেই কারণে এই বায়ু জল স্রোতের দক্ষিণমুখী নিঃসরণ বাধা সৃষ্টি করে। আর সেই কারণে বঙ্গোপসাগরের পানির স্তর সমতলের তুলনায় তিন থেকে চার ফুট উচ্চতা বৃদ্ধি পায়। আর তা থেকেই সৃষ্টি হয় প্রাকৃতিক দুর্যোগ বন্যা।

বন উজারঃ বনাঞ্চল মানেই গাছপালার সমাহার। আমরা সকলেই জানি পৃথিবীর বুকে গাছপালার গুরুত্ব কতটুকু। গাছপালা না থাকলে আমাদের জন্য তা কতটা ভয়ংকর হতে পারে। কিন্তু এত কিছু জানার পরেও প্রতিনিয়তই গাছপালা কেটে ফেলা হচ্ছে। 

বন উজার করা হচ্ছে। গাছপালা বাতাসের গতি কমাতে অনেক বেশি সাহায্য করে এছাড়াও মাটির ক্ষয় রোধে গাছপালার ভূমিকা অনেক বেশি। প্রতিনিয়তই বন উজাড় করার কারণে দিন দিন ভূমিধস সহ বিভিন্ন ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগ বেড়েই চলেছে।

ভূ-তাত্ত্বিক গঠনঃ বাংলাদেশ নদীর দেশ নামেও পরিচিত। বাংলাদেশের পুরো বাংলাদেশ জুড়ে অনেকগুলো নদী দেখা যায়। আর সে কারণেই বাংলাদেশে বন্যার পরিমাণ ও বেশি হয়ে থাকে। বন্যা হওয়ার প্রধান কারণ হিসেবে ধরা যায় ভূতাত্ত্বিক গঠন। আমাদের দেশের প্রধান তিনটি নদী পদ্মা যমুনা ও মেঘনা। 

এই তিনটি নদীর মিলনস্থলে সৃষ্টি হয়েছে বৃহত্তম ব- দ্বীপ। যা এদেশের পৃষ্ঠদেশ থেকে 6 থেকে 7 মিটার উঁচু। আর যখন বর্ষাকালে এই তিনটি নদীর পানি বেড়ে যায় তখন সেই পানি অতিবাহিত হয়ে বাংলাদেশের ভেতরে প্রবেশ করে এবং বন্যা সৃষ্টি করে।

নদীর তীর ভরাটঃ দিন দিন লক্ষ্য করা যাচ্ছে যে মানুষ নদীর তীর ভরাট করে বিভিন্ন ধরনের বড় বড় কলকারখানা তৈরি করছে। নদীর তীর ভরাট করার কারণে নদী তার গতিপথ পরিবর্তন করতে বাধ্য হচ্ছে আর সেই কারণেও সৃষ্টি হচ্ছে বন্যা।

ফারাক্কা বাঁধঃ বাংলাদেশে অতিরিক্ত বন্যা হওয়ার আরেকটি প্রধান কারণ হচ্ছে বর্ষাকালে ফারাক্কা বাঁধ এর গেট খুলে দেওয়া। বাংলাদেশ ও ভারত এর মাঝে সৃষ্টি হয়েছে একটি বড় ধরনের বাঁধ যার নাম হচ্ছে ফারাক্কা বাঁধ। ফারাক্কা বাঁধ তৈরি করা হয় ১৯৭৫ সালে। ফারাক্কা বাঁধ লম্বায় ৭৩৫০ ফুট। 

আর এই ফারাক্কা বাঁধ বাংলাদেশের দুঃখ নামেও পরিচিত। বর্ষা মৌসুমে যখন ভারতে পানির পরিমাণ বেড়ে যায় তখন খুলে দেওয়া হয় এই ফারাক্কা বাঁধের গেট। ভারতের সব পানি এসে জমা হয় বাংলাদেশের বুকে। আর এই কারণেই ভেসে যাই বাংলাদেশের হাজার হাজার মানুষ বন্যা তে।

জলবায়ু পরিবর্তনঃ প্রাকৃতিক দুর্যোগের আরেকটি প্রধান কারণ হিসেবে ধরা যেতে পারে জলবায়ুর পরিবর্তন। জলবায়ুর পরিবর্তনের কারণে বিভিন্ন ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগের সম্মুখীন হতে হয়। যেমন বর্ষাকালে অতি বৃষ্টির কারণে বন্যায় ভেসে যায় বাংলাদেশ। 

আবার গরমকালে অতিরিক্ত গরম করার কারণে সম্মুখীন হতে হয় খরার মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগে। সময় যত যাচ্ছে জলবায়ুর পরিবর্তন তত যেন চোখে পড়ছে।

অপরিকল্পিত নগরায়নঃ বাংলাদেশের জনসংখ্যা প্রতিনিয়ত বেড়েই চলেছে। আর সেই কারণে তৈরি হচ্ছে নগরায়ন। বিভিন্ন অঞ্চলে কৃষি জমি থেকে শুরু করে গাছপালা কেটে তৈরি করা হচ্ছে বাসস্থান। যে সকল কার্যকলাপ করা হচ্ছে পরিকল্পনা ছাড়াই। আর এই অপরিকল্পিত নগরায়ন হচ্ছে প্রাকৃতিক দুর্যোগের একটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ।

বাংলাদেশের প্রাকৃতিক দুর্যোগ

বাংলাদেশের মানুষ বছরের প্রায় সময় বিভিন্ন ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগের মোকাবেলা করে থাকেন। কখনো বন্যা অথবা কখনো খরা কিংবা ভূমিকম্পের মতো বিভিন্ন ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগ বাংলাদেশের বুকে বসবাস করা মানুষদের বিভিন্ন রকম ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। 

বেশ কিছু প্রাকৃতিক দুর্যোগ রয়েছে যে সকল প্রাকৃতিক দুর্যোগ বাংলাদেশের মানুষ মোকাবেলা করেছে। কিছু কিছু প্রাকৃতিক দুর্যোগের সাথে মোকাবেলা করেছে পূর্ব পরিকল্পনা দ্বারা আবার কিছু কিছু প্রাকৃতিক দুর্যোগের সাথে মোকাবেলা করেছে কোন রকম পরিকল্পনা ছাড়াই। বাংলাদেশের প্রাকৃতিক দুর্যোগ কি কি সেই সম্পর্কে জানুন।

খরাঃ খরা বলতে কী বোঝায় তা আমরা সকলেই জানি। খরা বলতে বোঝায় কোন স্থানে যখন স্বাভাবিকের চেয়ে বৃষ্টিপাত কম হওয়ার কারণে চারপাশ শুকিয়ে যায় তাকে। যখন বৃষ্টির পরিমাণ কম হয় আর রোদের তাপমাত্রা বেড়ে যায় আর সেই কারণে পৃথিবীর বুকে পানির পরিমাণ কমে যায়। 

ফলে চারপাশ মরুভূমির মতো শুকিয়ে যায় এবং আবাদি ফসল ও কম হয়। এর কারণে দেখা দেয় খাদ্যের স্বল্পতা। বাংলাদেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চল এবং দক্ষিণাঞ্চল বেশি খরা দেখা দিয়ে থাকে।

নদী ভাঙ্গনঃ নদী ভাঙ্গন বাংলাদেশের একটি প্রাকৃতিক দুর্যোগ হিসেবে পরিচিত। বাংলাদেশ নদীমাতৃক দেশ হওয়ার কারণে বাংলাদেশের বুকে রয়েছে অনেক নদী। আর সেই নদীর তীরবর্তী এলাকায় নদী ভাঙ্গনের কারণে দেখা দেয় বিভিন্ন ধরনের ক্ষয়ক্ষতি। নদী ভাঙ্গনের কারণে নদীর আশেপাশের এলাকা পানিতে ডুবে যায়।

তাছাড়াও আবাদি জমি এবং গাছপালার হয় অনেক ক্ষয়ক্ষতি। বাংলাদেশে প্রতি বছরই নদী ভাঙ্গন দেখা দিয়ে থাকে। বেশ কিছু পদক্ষেপ রয়েছে সেই সকল পদক্ষেপ অনুযায়ী কাজ করলে বাংলাদেশের মানুষ নদী ভাঙ্গনের হাত থেকে রক্ষা পেতে পারে।
নদী ভাঙ্গন রোধে করণীয় কি কি সেই কথা জানুনঃ
  • নদী ভাঙ্গন রোধ করতে হলে নদীর তীরে মজবুত করে বাঁধ তৈরি করতে হবে।
  • নদীর তীরে বেশি বেশি গাছপালা রোপন করতে হবে।
  • নদী ভরাট করা থেকে বিরত থাকতে হবে।
  • বছরের যে সময় নদী ভাঙ্গন বেশি হয় সেই সময়ের পূর্বেই বিভিন্ন ধরনের পূর্ব প্রস্তুতি নিতে হবে।
  • সাধারণ মানুষদের মাঝে নদী ভাঙ্গন সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে।
ভূমিকম্পঃ ভূমিকম্প হচ্ছে একটি অনাকাঙ্ক্ষিত প্রাকৃতিক দুর্যোগ। ভূমিকম্পের কারণে ভূ-পৃষ্ঠে সৃষ্টি হয় এক ধরনের কম্পন। আর সেই কোম্পানি কেঁপে উঠে পৃথিবীর বুকে। ভূমিকম্পের কারণে সব সময় যে ক্ষতি হয় তা কিন্তু নয়। 

ভূমিকম্পের মাত্রা বৃদ্ধি পেলে দেখা দেয় ক্ষয়ক্ষতি। বাংলাদেশকে ভূমিকম্প প্রবণ দেশ বলা হয়ে থাকে। এখন পর্যন্ত ভূমিকম্পের মাত্রা পরিমাপের ক্ষেত্রে ০ থেকে ৯ পর্যন্ত নির্ণয় করা হয়েছে। বাংলাদেশে সর্বোচ্চ ভূমিকম্পের মাত্রা নির্ণয় করা হয়েছে ৬ যা হয় ২০২১ সালে। 

আর সেই কারণে বাংলাদেশকে এখন পর্যন্ত ভূমিকম্পের কারণে কোন মারাত্মক ক্ষয়ক্ষতির সম্মুখীন হতে হয়নি। কিন্তু যদি ভূমিকম্পের মাত্রা ৭ এর উপর বৃদ্ধি পায় তাহলে হতে পারে বড় ধরনের ক্ষতি।

ভূমিক্ষয়ঃ ভূমিক্ষয় কি আপনি কি তা জানেন। ভূমিক্ষয় হচ্ছে কোন স্থানের মাটির উপরের অংশ ধীরে ধীরে অপসারিত হয়। ভূমিক্ষয় হওয়ার প্রধান কারণ হচ্ছে গাছপালার পরিমাণ কমে যাওয়া। বাংলাদেশে প্রতিনিয়ত গাছপালা কাটার কারণে গাছপালার পরিমাণ কমে যাচ্ছে। 

আর সেই কারণে দেখা দিচ্ছে ভূমিক্ষয় এর মত প্রাকৃতিক দুর্যোগ। ভূমিক্ষয় এর কারনে মাটির উর্বরতা কমে যায় আর সেই কারণে ফসলের উৎপাদন ও কমে যায়। ভূমিক্ষয় এর কারণে প্রতিনিয়তই বাংলাদেশে উৎপাদিত ফসলের পরিমাণ কমছে।

জলোচ্ছ্বাসঃ জলোচ্ছ্বাস এই কথা শুনলেই যেন উপকূলীয় অঞ্চলের মানুষদের মনে সৃষ্টি হয় একটি বিশাল আতঙ্ক। উপকূলীয় অঞ্চলের আশেপাশে অবস্থিত মানুষদের জান মালের ভয়ংকর ভাবে ক্ষতি হয় জলোচ্ছ্বাসের কারণে। 

বঙ্গোপসাগরে সৃষ্টি হয় এক ধরনের নিম্নচাপ আর সেই নিম্নচাপের কারণে আতঙ্ক দেখা দেয় খুলনা, ভোলা, বাগেরহাট, কক্সবাজার, পটুয়াখালী, চট্টগ্রাম ইত্যাদি অঞ্চলের মানুষদের মনে। বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট নিম্নচাপের কারণে এর সকল অঞ্চলে আছড়ে পড়ে সামুদ্রিক ঝড়। 

যার ফলে দেখা দেয় এক বিশাল ধ্বংসযজ্ঞ। বাংলাদেশের মানুষ কিছু ভয়ঙ্কর জলোচ্ছ্বাসের সাক্ষী হয়ে আছে। যা দেখা দিয়েছিল ১৯৬০, ১৯৭০, ১৯৮৫, ১৯৯১ এবং ১৯৯৭ সালে।

মৌসুমী ঝড়ঃ মৌসুমী ঝড় বলতে আমরা বুঝি বিভিন্ন মৌসুমে প্রাকৃতিকভাবে যেই সকল ঝড় সৃষ্টি হয়ে থাকে তাকে। তার মধ্যে কিছু কিছু মৌসুমী ঝড়ের নাম হচ্ছে সাইক্লোন, হারিকেন, টর্নেডো, টাইফুন, ভোলা। 

বেশ কিছু ঘূর্ণিঝড়ের জল জানত প্রমাণ হিসাবে বেঁচে আছে বাংলাদেশ। যেমনঃ ১৯৭০ সালে ১৩ ই নভেম্বর গ্রেট ভোলা সাইক্লোন নামে একটি ঘূর্ণিঝড় আসে বাংলাদেশের বুকে যা প্রাণ নেই প্রায় সাড়ে পাঁচ লাখ মানুষের। 

বাংলাদেশের বুকে এটি কে সবচেয়ে ভয়ঙ্কর ঘূর্ণিঝড় বলা হয়ে থাকে। এছাড়াও ১৯৯১, ২০০৭, ২০০৯, ২০২২ সালেও বাংলাদেশ এক বিশাল ঘূর্ণিঝড়ের সম্মুখীন হয়।

বন্যাঃ বন্যা এটি যেন বাংলাদেশের একটি পরিচিত প্রাকৃতিক দুর্যোগ। প্রতি বছরই বাংলাদেশের বেশ কিছু অঞ্চল বন্যার কারণে ডুবে যায়। বন্যার কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হয় হাজার হাজার মানুষ। বাংলাদেশের বুকে একটি পরিচিত প্রাকৃতিক দুর্যোগ। 

এই প্রাকৃতিক দুর্যোগের মোকাবেলা করে বাংলাদেশের মানুষজন প্রতি বছর। বন্যার কারণে বিভিন্ন এলাকা সহ আবাদি জমি এবং গৃহপালিত পশুর ও হয় ব্যাপক ক্ষতি। প্রতিবছর বাংলাদেশের বুকে বন্যা দেখা দিলেও কিছু কিছু সাল রয়েছে যে সকল সালে বন্যা দেখিয়েছিল তার ভয়ংকর রূপ। 

বাংলাদেশে ১৯৯৮ সালে বন্যায় ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ ছিল সবচেয়ে বেশি। এছাড়াও ১৯৭৪, ১৯৭৭, ১৯৮০, ১৯৮৭, ১৯৮৮, ১৯৯৮, ২০০৪, ২০০৭ সালেও বলা হয় বাংলাদেশের স্মরণকালের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় বন্যা হয়েছিল। 

এছাড়াও ২০১৩ সালে বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলে দেখা যায় কিছু অঞ্চলে বন্যা। ২০১৭ সালেও উত্তরাঞ্চল ভয়াবহ বন্যার সম্মুখীন হয়। বন্যার কারণে বিভিন্ন ধরনের ক্ষয়ক্ষতি হলেও বন্যার কারণে জমির উর্বরতা বৃদ্ধি পায়।

শিলাবৃষ্টিঃ বাংলাদেশে প্রায় প্রতি বছরই শিলাবৃষ্টি দেখা দিয়ে থাকে। শিলাবৃষ্টির কারণে আবাসস্থান সহ ফসলের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়ে থাকে। বাংলাদেশে শিলাবৃষ্টির দেখা দেয় বৈশাখ এবং জৈষ্ঠ মাসে। 

বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলে অবস্থিত রয়েছে রংপুর, ঠাকুরগাঁও, পঞ্চগড়, লালমনিরহাট এই সকল অঞ্চলে শিলাবৃষ্টি দেখা দিয়ে থাকে। এ সকল অঞ্চল ছাড়াও বগুড়া, রাজশাহী এবং সিরাজগঞ্জ অঞ্চলকেও শিলাবৃষ্টি প্রবণ এলাকার বলা হয়ে থাকে।

প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে ক্ষয়ক্ষতি

প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে বাংলাদেশের প্রতিবছর ব্যাপক পরিমাণে ক্ষয়ক্ষতি হয়ে থাকে। বছর ঘুরে সেই সকল ক্ষয়ক্ষতি পূরণ করতে না করতেই শুরু হয় আবার প্রাকৃতিক দুর্যোগ। বাংলাদেশে প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে ক্ষয়ক্ষতি।

পরিবেশের ক্ষতিঃ প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে বাংলাদেশ পরিবেশগত বিভিন্ন রকম ক্ষয়ক্ষতি হয়ে থাকে। যেমন বন্যার কারণে বিভিন্ন অঞ্চল ডুবে যায় এবং পরিবেশের ক্ষয়ক্ষতি দেখা দেয়। এছাড়াও প্রাকৃতিক ঝড় অথবা ভূমিক্ষয় এর কারণে পরিবেশের বিভিন্ন রকম ক্ষয়ক্ষতি হয়ে থাকে।

সম্পত্তির ক্ষতিঃ বাংলাদেশের সম্পত্তির ক্ষয়ক্ষতি হওয়ার একটি প্রধান কারণ হচ্ছে প্রাকৃতিক দুর্যোগ। প্রাকৃতিক দুর্যোগে ঘরবাড়ি, কলকারখানা, রাস্তাঘাট সহ বিভিন্ন ধরনের সম্পদের প্রচুর পরিমাণে ক্ষয়ক্ষতি হয়ে থাকে।

মানুষের প্রাণহানিঃ প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে প্রতিবছর বাংলাদেশের বেশ কিছু মানুষ প্রাণ হারিয়ে থাকে। বন্যা অথবা খরা কিংবা জলোচ্ছ্বাস ও ভূমিকম্প বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগে অনেক মানুষ মারা যায়। এ থেকে বলা যায় যে প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে মানুষের প্রাণহানি হয়ে থাকে।

সামাজিক ক্ষতিঃ বাংলাদেশের সামাজিক ক্ষয়ক্ষতির একটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ হিসেবে পরিচিত হচ্ছে প্রাকৃতিক দুর্যোগ। বন্যা অথবা খরার কারণে খাদ্যের স্বল্পতা থেকে শুরু করে ঘূর্ণিঝড়ে সাধারণ মানুষের আশ্রয়হীনতা এ সকল সামাজিক ক্ষতির প্রধান কারণ হচ্ছে প্রাকৃতিক দুর্যোগ।

প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলায় করণীয়

বাংলাদেশের কিছু কিছু প্রাকৃতিক দুর্যোগের মোকাবেলা করার জন্য আমরা পূর্ব প্রস্তুতি নিতে পারি কিন্তু কিছু কিছু প্রাকৃতিক দুর্যোগের ক্ষেত্রে আমরা পূর্ব প্রস্তুতি নিতে পারি না। কারণ সে সকল প্রাকৃতিক দুর্যোগ আসে হঠাৎ করেই। 

আর সেই কারণে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ বৃদ্ধি পায়। প্রাকৃতিক দুর্যোগ রোধ করা আমাদের পক্ষে সম্ভব নয় কিন্তু আমাদের পক্ষে যদি সম্ভব তা হচ্ছে প্রাকৃতিক দুর্যোগের ক্ষয়ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য কিছু পূর্ব প্রস্তুতি গ্রহণ করা। 

প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলায় করণীয়গুলো সঠিকভাবে মেনে চলা। তাই প্রাকৃতিক দুর্যোগকে ভয় নয় প্রাকৃতিক দুর্যোগকে মোকাবেলা করতে শিখুন।
প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলায় করণীয় গুলো কি কি জেনে নিনঃ
  • প্রাকৃতিক দুর্যোগ সম্পর্কে সাধারণ মানুষকে আরো বেশি সচেতন হতে হবে। প্রাকৃতিক দুর্যোগকে অবহেলা না করে প্রাকৃতিক দুর্যোগ হওয়ার পূর্বেই কিছু প্রস্তুতি গ্রহণ করতে হবে।
  • প্রাকৃতিক দুর্যোগের পূর্বাভাস এবং সর্তকতা ব্যবস্থা গুলোকে আরো বেশি জোরদার হতে হবে।
  • প্রাকৃতিক দুর্যোগ সম্পর্কে কোনো রকম পূর্বাভাস কিংবা সতর্কতা দিলে সে সকল পূর্বাভাস এবং সতর্কতা অনুযায়ী কাজ করতে হবে।
  • প্রাকৃতিক দুর্যোগ দেখা দেওয়ার পর ক্ষতিগ্রস্তদের সাহায্য করতে হবে।
  • যে সকল এলাকায় বন্যা প্রতিবছর দেখা দেয় সে সকল এলাকায় উঁচু আশ্রয়স্থল তৈরি করতে হবে।
  • খরা থেকে রক্ষা পেতে জমিতে সেচ ব্যবস্থা চালু করতে হবে।
  • উপকূলীয় অঞ্চলে ঘূর্ণিঝড়ের পূর্বাভাস দিলে সে সকল অঞ্চল থেকে দূরে যেতে হবে।
  • ভূমিক্ষয় রোধ করতে প্রচুর পরিমাণে গাছ লাগাতে হবে।
  • নদী ভাঙ্গন রোধ করার জন্য নদীর তীরে মজবুত বাঁধ সৃষ্টি করতে হবে।

লেখকের মন্তব্যঃ বাংলাদেশের প্রাকৃতিক দুর্যোগ রচনা

আমরা আজকের আর্টিকেলে আপনাদের সামনে বাংলাদেশের প্রাকৃতিক দুর্যোগ রচনা নিয়ে বেশ কিছু পয়েন্ট আলোচনা করলাম। আশা করছি আপনারা আর্টিকেলটি পড়ে বাংলাদেশের প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণ কি এবং বাংলাদেশে প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলায় আপনাদের করণীয় কি সেই সম্পর্কে বুঝতে পেরেছেন। 

প্রাকৃতিক দুর্যোগের হাত থেকে রক্ষা পাওয়ার একমাত্র উপায় হচ্ছে সচেতনতা বৃদ্ধি। তাই নিজেকে সচেতন থাকতে হবে এবং অপরকে সচেতন করতে হবে।
ধন্যবাদ

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

দ্যা বর্ষা ওয়েব সাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url