আল্ট্রাসনোগ্রাম রিপোর্ট ছেলে না মেয়ে বোঝার উপায় জেনে নিন
নাভি দেখে সন্তান বোঝার উপায় জানুনপ্রতিটি পরিবারের একজন গর্ভবতী মায়ের গর্ভে থাকা সন্তান ছেলে না মেয়ে এ বিষয়ে
সকলেই জানতে আগ্রহী থাকে। বর্তমান এই ডিজিটাল যুগের প্রচলিত আল্ট্রাসনোগ্রাম
রিপোর্ট ছেলে না মেয়ে বোঝার উপায় রয়েছে। অর্থাৎ গর্ভবতী মায়ের গর্ভে সন্তান
ছেলে না মেয়ে হবে সেটি জেনে নেয়া যায়। বিশেষ করে গর্ভবতী মায়ের গর্ভের সন্তান
এর স্বাস্থ্য সচেতনতার জন্য কখন আলট্রাসনোগ্রাম করা যাবে? সেই সাথে
আল্ট্রাসনোগ্রাম রিপোর্ট ছেলে না মেয়ে বোঝার উপায় নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করব।
একজন গর্ভবতী মায়ের গর্ভের শিশুর অবস্থান এবং জেন্ডার জানার জন্য বিশেষ কয়েকটি
উপায় আছে তার মধ্যে সব থেকে সুবিধার জন্য এবং সুরক্ষিত হচ্ছে আল্ট্রাসনোগ্রাম।
এক্ষেত্রে আল্ট্রাসনোগ্রাম রিপোর্টে সন্তান ছেলে না মেয়ে হবে সেটা উল্লেখ করা
থাকে না।
এর জন্য আলাদাভাবে আল্ট্রাসনোগ্রাম রিপোর্ট ছেলে না মেয়ে বোঝার উপায় আছে।
কিন্তু এ বিষয়টি পুরোপুরি বোঝার এক্তিয়ার থাকে ডাক্তারের কাছে।
আমরা জানি প্রতিটি মানুষ আল্লাহর সৃষ্টি। আর আল্লাহ সব থেকে ভালো জানে কোন
মানুষকে কিভাবে সৃষ্টি করবেন। আর আল্লাহর সৃষ্টি সব সময় সুন্দর হয়ে থাকে।
গর্ভবতী মায়েদের গর্ভে ছেলে নাকি মেয়ে এটা সম্পূর্ণ আল্লাহ তালাই ভালো জানেন।
তো গর্ভবতী মায়েদের আল্ট্রাসনোগ্রাম করে রিপোর্ট সংগ্রহ করে ছেলে না মেয়ে হবে
নিশ্চিত হওয়া ঠিক না।
আরও পড়ুনঃ গর্ভবতী হওয়ার প্রথম সপ্তাহের লক্ষণ
বিশেষ করে আমাদের সমাজে এমন অসংখ্য মানুষ রয়েছে যারা না জেনে বুঝে
আলট্রাসনোগ্রাম করে মানুষের মাঝে বিভ্রান্তি বা সংবাদ প্রকাশ করে ছেলে নাকি মেয়ে
হবে। তাই এই ধরনের রিপোর্ট না বুঝে সংবাদ প্রকাশ করা থেকে বিরত থাকতে হবে।
তো চিন্তার কোন কারণ নেই আজকের এই আর্টিকেলটি এমনভাবে প্রস্তুত করা হয়েছে যা
অনুসরণ করে আপনারা আলট্রাসনোগ্রাম রিপোর্ট ছেলে না মেয়ে বোঝার উপায় জেনে যাবেন।
তাই আশা করব এই আর্টিকেলটি শেষ পর্যন্ত মনোযোগ দিয়ে পরবেন।
আলট্রাসনোগ্রাম কি?
আল্ট্রাসনোগ্রাম হচ্ছে একটি শব্দ তরঙ্গ যাকে মেডিকেল চেকআপ বলা হয়। একটিমাত্র
শব্দ তরঙ্গ ব্যবহার করে মানবদেহে অভ্যন্তরীণ অঙ্গ, টিস্যু কিংবা অন্যান্য গর্ভে
অবস্থানের ছবি তৈরি করে থাকে।
মানব দেহের অভ্যন্তরীণ স্ক্যানিং করার জন্য হাই ফ্রিকুয়েন্সি কিংবা আলট্রা
ফ্রিকোয়েন্সি ফাউন্ড ওয়েব ব্যবহার করে ফ্রিকোয়েন্সি সাউন্ড অফ ব্যবহার করা
হয়ে থাকে।
আরও পড়ুনঃ মিনিকন পিল খাওয়ার কত দিন পর মাসিক হয়
তো এই প্রক্রিয়াকে মূলত আলট্রাসনোগ্রাম বলা হয়ে থাকে। আবার এই আল্ট্রাসনোগ্রাম
কে আলট্রাসনোগ্রাফি, সনোগ্রাফি কিংবা আল্ট্রাস সাউন্ড বলা হয়।
আল্ট্রাসনোগ্রাম কখন করা যায়?
আল্ট্রাসনোগ্রাম বিভিন্ন ধরনের রোগে আক্রান্ত হলে এবং গর্ভবতী মায়ের গর্ভাবস্থা
জানার জন্য একটি সুরক্ষা মেডিকেল চেকআপ, আলট্রাসনোগ্রাম করার জন্য এটি সঠিক সময়
নির্ধারণ হয়।
সাধারণত গর্ভাবস্থায় বাই সপ্তাহ অতিক্রম করার পরে, আল্ট্রাসনোগ্রাম করার মাধ্যমে
গর্ভে থাকা শিশুর জেন্ডার/ লিঙ্গ জানা সম্ভব হয়। এতে কিছু বাচ্চার অবস্থান ভেদে
সময়ের কারণে আল্ট্রাসনোগ্রাম রিপোর্ট ছেলে না মেয়ে বোঝার উপায় স্পষ্ট নাও হতে
পারে।
প্রেগনেন্সি অবস্থায় ৩০ সপ্তাহের মতো অতিবাহিত হলে প্রায় নিশ্চিতভাবে সন্তানের
লিঙ্গ বোঝা সম্ভব হয়ে ওঠে। আর সম্পূর্ণরূপে থ্রিডি আল্ট্রাসনোগ্রাফি করার ফলে,
আল্ট্রাসনোগ্রাম রিপোর্ট ছেলে না মেয়ে বোঝার উপায় একদম ক্লিয়ার হয়ে যায়।
আল্ট্রাসনোগ্রাম রিপোর্ট / প্রেগনেন্সি রিপোর্ট
আল্ট্রাসনোগ্রাফ মেশিন এর মাধ্যমে হাই ফ্রিকুয়েন্সি শব্দ তরঙ্গের মাধ্যমে
গর্ভবতী মায়ের চেকআপ করার পরে একটি রিপোর্ট দেওয়া হয়।
উক্ত প্রেগনেন্সি রিপোর্টে গর্ভে থাকা সন্তান সম্পর্কে বিশেষ কিছু তথ্য উল্লেখ
করা হয়। তো আমি আপনাদের সুবিধার্থে এখানে আলট্রাসনোগ্রাফ রিপোর্টে যে তথ্য গুলো
পাওয়া যায় তার কিছু ধারণা দেওয়ার চেষ্টা করব। যেমন-
ভ্রুনের সংখ্যা (Fetal Number)
গর্ভে ভ্রুনের সংখ্যা নির্দেশ প্রদান করে। একটি গর্ভে থাকা শিশুর ভ্রুন থাকলে,
ওয়ান, সিঙ্গেল এবং রমস বাচ্চা হলে টু, ডাবল উল্লেখ করা হয়।
ভ্রুনের অবস্থান (Fetal Position)
এই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে গর্ভাবস্থায় ভ্রুনের অবস্থান সম্পর্কে জেনে নেওয়া যায়।
ভ্রুনের হৃদস্পন্দনের হার ( Fetal Heart Rate)
এই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে প্রতি মিনিটে ভ্রুনের হৃদস্পন্দন এর হার বোঝানো হয়ে
থাকে।
অ্যানমিওটিক ফ্লুইড সূচক (Amniotic Fluid Index)
এই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে গর্ভের তরল সূচক নির্দেশন করা হয় যেখানে গর্ভের ভ্রুনল
ভাসমান রয়েছে। অ্যানমিওটিক ফ্লুইড সূচক (5cm - 25cm) এর মধ্যবর্তী হওয়া
সুরক্ষিত এবং স্বাভাবিক। 5cm - 25cm এরকম হলে অলিগো-হাইড্রামনিওস ও
পলি-হাইড্রামনিওস সমস্যার সৃষ্টি হয়।
প্লাসেন্টা (Placenta)
প্লাসেন্টা প্রেগনেন্সি অবস্থায় জরায়ুর বিকাশ লাভ করার একটি অঙ্গ বিশেষ। এটি
ক্রমবর্ধমান বাচ্চাকে অক্সিজেন ও পুষ্টি প্রদান করে থাকে, শিশুর রক্ত থেকে বর্জ্য
পদার্থ বের করে। সেই সাথে জরায়ুর প্রাচীর এর সঙ্গে সংযুক্ত হয়, যা থেকে শিশুর
নাভির উদ্ভব ঘটে।
ভ্রুণের শারীরবৃত্তীয় জরিপ (Fetal Anatomic Survey)
ভ্রুন এর হার্ট, কিডনি, স্পাইন, পাকস্থলী ইত্যাদি তৈরি হচ্ছে কিনা, এই ধরনের
অবস্থা উল্লেখিত হয়, সে সাথে আল্ট্রাসনোগ্রাম রিপোর্ট ছেলে না মেয়ে বোঝার উপায়
পাওয়া যায় না।
জি.এ গর্ভকালীন বয়স (GA Gestational Age)
এর মাধ্যমে প্রেগনেন্সি/ গর্ভাবস্থা কতটা দীর্ঘ তা জানা সম্ভব হয়। এজন্য
গর্ভধারণকারী এর শেষ মাসিক চক্রের প্রথম দিন থেকে বর্তমান তারিখ পর্যন্ত হিসাব
রাখতে হয়। যার ফলে কবে নাগাদ শিশু ভূমিষ্ঠ হবে, সে বিষয়ে জানা সম্ভব হয়।
আপনারা উক্ত রিপোর্টে থাকা তথ্যগুলো অনুযায়ী সহজেই প্রেগন্যান্সি তথ্য আপডেট
পেয়ে যাবেন। আর আমরা যে তথ্যগুলো আপনাকে জানিয়ে দিলাম এগুলো আল্ট্রা সাউন্ড
রিপোর্টে উল্লেখ থাকবে।
এক্ষেত্রে চিকিৎসা করার বিভিন্ন ফর্মালিটি ভেদে প্রেগনেন্সি রিপোর্টে বিভিন্ন
অপশন বা চিহ্ন উল্লেখ থাকতে পারে। যার মাধ্যমে মূলত আল্ট্রাসনোগ্রাম রিপোর্ট ছেলে
না মেয়ে বোঝার উপায় একসাথে শারীরিক অবস্থা সম্পর্কে সহজেই জেনে নেয়া যাবে৷
আল্ট্রাসনোগ্রাম রিপোর্ট ছেলে না মেয়ে বোঝার উপায় কি?
প্রেগনেন্সি অবস্থায় ভ্রুনের উন্নয়ন হওয়ার পরে আল্ট্রাসনোগ্রাম করলে,
আল্ট্রাসনোগ্রাম রিপোর্ট ছেলে না মেয়ে বোঝার উপায় স্পষ্ট হয় না।
ডিজিটাল এই প্রযুক্তির যুগে সন্তান ভূমিষ্ঠ হওয়ার আগ পর্যন্ত ১০০% নিশ্চিত হওয়া
সম্ভব হওয়া যায় না গর্ভের সন্তানের লিঙ্গ বা জেন্ডার আসলে কি? এক্ষেত্রে
আল্ট্রাসনোগ্রাফি এর মাধ্যমে প্রেগনেন্সির রিপোর্টের নির্দিষ্ট কিছু তথ্যের
মাধ্যমে বাচ্চার জেন্ডার বা লিঙ্গ নির্ধারণ করা হয়। তো আসুন এ বিষয়ে জেনে আসি।
প্রেগনেন্সি/গর্ভবতী মায়ের রক্তচাপঃ চীন দেশের একটি গর্ভবতী মহিলার উপর
গবেষণা করে দেখা গিয়েছে, গর্ভের সন্তান ছেলে না মেয়ে তা বোঝার সবচেয়ে কার্যকর
উপায় হচ্ছে, মায়ের রক্তচাপ। প্রেগনেন্সি অবস্থায় রক্তচাপ কম থাকলে মেয়ে
সন্তান হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। অন্যদিকে রক্তচাপ বেশি পরিমাণে থাকলে ছেলে সন্তান
হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
ভ্রুনের হার্টবিটঃ গর্ভে ভ্রুনের হার্টবিট হার মিনিটে ১৪০ স্পন্দন এর বেশি
থাকলে মেয়ে, কম থাকলে ছেলে সন্তান হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
আল্ট্রাসনোগ্রাম রিপোর্ট চিহ্নঃ আল্ট্রাসনোগ্রাম রিপোর্ট অনেক কয়েকটি
মেশিন সাংকেতিক চিহ্ন ব্যবহার করে থাক। এ সকল চিহ্নের নির্দিষ্ট অর্থ হচ্ছে যা
গর্ভের বাচ্চার লিঙ্গ প্রকাশ করে।
তো আসুন জেনে নেয়া যাক, আলট্রাসনোগ্রাম রিপোর্ট দেখে কিভাবে বুঝবেন গর্ভে ছেলে
না মেয়ে সন্তান আছে ।
আলট্রাসনোগ্রাম রিপোর্ট ছেলে সন্তান বোঝার উপায়
প্রেগনেন্সি রিপোর্টের ডেসক্রিপশন এ Gender ‘M’ বা Gender ‘Boy’ লেখা থাকে। আবার
কিছু কিছু আল্ট্রাসনোগ্রাম মেশিন এর রিপোর্টের নিচের অংশে একটি বৃত্তের সাথে তীর
যুক্ত থাকলে যাকে জেন্ডার ছেলে হিসেবে নির্দেশ প্রদান করে।
আলট্রাসনোগ্রাম রিপোর্ট মেয়ে সন্তান বোঝার উপায়
প্রেগনেন্সি রিপোর্টের ডেসক্রিপশন এ Gender ‘F’, ‘N’ বা Gender ‘ Girl’ লেখা
থাকে। এছাড়া আলট্রাসনোগ্রাম মেশিন এর রিপোর্টের নিচের অংশে একটি বৃত্তের সাথে
প্লাস চিহ্ন যুক্ত থাকে যার জেন্ডার মেয়ে নির্দেশ প্রদান করে।
তো আপনারা এই ধরনের তথ্য জানতে বা দেখতে পারলে বুঝতে পারবেন। আল্ট্রাসনোগ্রাম
রিপোর্ট ছেলে না মেয়ে বোঝার উপায় স্পষ্ট হয়ে যাবে।
গর্ভে থেকে বাচ্চার লিঙ্গ আল্ট্রা সাউন্ড এ না বুঝতে পারার কারন কি?
প্রেগন্যান্সি অবস্থায় আল্ট্রাসনোগ্রাম চেকআপ করা হলে, বেশকিছু কারণের জন্য
বাচ্চার জেন্ডার বোঝা সম্ভব হয়ে ওঠে না। এই সমস্যার কিছু কারণ হলো -
- 22 সপ্তাহর আগে আল্ট্রা সোনোগ্রাম করানো হলে জেন্ডার দেখা সম্ভাবনা।
- পেটে অতিমাত্রায় ফ্যাট বা চর্বি থাকলে জেন্ডার দেখা সম্ভব হয় না।
- প্রেগনেন্সি মায়ের জরায়ুতে অ্যামনিওটিক ফ্লুইড এর পরিমাণ কম থাকলেও বাচ্চার জেন্ডার দেখা সম্ভব হয় না।
- আল্ট্রাসনোগ্রাম করানোর সময় বাচ্চার দো পা চেপে রাখলে অথবা নাড় পেচিয়ে থাকলে বাচ্চার জেন্ডার দেখা সম্ভব হয় না।
- টুডি আল্ট্রা সাউন্ড মেশিন ব্যবহার করা হলে থ্রিডি এর তুলনায় কম স্পষ্ট হয় বাচ্চা ছেলে না মেয়ে হবে।
মোটকথা আল্ট্রাসনোগ্রাম রিপোর্ট এ কোন সমস্যা থাকলে, গর্ভে ছেলে না মেয়ে রয়েছে
সেটি বোঝার উপায় থাকে না।
শেষ কথাঃ আল্ট্রাসোনোগ্রাম রিপোর্ট ছেলে না মেয়ে বোঝার উপায়
আমাদের আজকের এই আর্টিকেলে আপনাদের সাথে শেয়ার করা হলো আল্ট্রাসনোগ্রাম রিপোর্ট
ছেলে না মেয়ে বোঝার উপায় কি এই সম্পর্কে।
এখন আপনি যদি আমাদের দেওয়া উক্ত আলোচনা মনোযোগ সহকারে পড়েন তাহলে অবশ্যই বুঝতে
পেরেছেন আলট্রাসনোগ্রাম রিপোর্ট ছেলে না মেয়ে বোঝার উপায় সম্পর্কে।
তারপরও যদি আপনার কোন প্রশ্ন থাকে অবশ্যই আমাদের কমেন্ট করে জানাতে পারেন। সেই
সাথে আমাদের আর্টিকেলটি আপনার ভালো লাগলে অবশ্যই এটি সোশ্যাল মিডিয়াতে শেয়ার
করে দিবেন।
ধন্যবাদ।
দ্যা বর্ষা ওয়েব সাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url