মেয়েদের জরায়ুতে টিউমার কেন হয় এবং তা সমাধানের সবথেকে সহজ উপায়
এখনকার মেয়েদের একটি বড় সমস্যা হচ্ছে জরায়ুতে টিউমার। আপনি কি জরায়ুতে টিউমার
হলে কি কি সমস্যা হতে পারে সেই সম্পর্কে জানতে চাচ্ছেন। তাহলে আমার লেখা মেয়েদের জরায়ুতে টিউমার কেন হয় এই আর্টিকেলটি পড়ুন। এই আর্টিকেলে আমি
বিস্তারিতভাবে জরায়ুতে টিউমার হলে করণীয় এবং মেয়েদের জরায়ুতে টিউমার কেন হয় সেই সম্পর্কে বিস্তারিতভাবে আলোচনা করেছি।
আশা করছি আমার লেখা মেয়েদের জরায়ুতে টিউমার কেন হয় এই আর্টিকেলটি পড়ে আপনি আপনার প্রয়োজনীয় তথ্য খুঁজে পাবেন এবং উপকৃত হবেন।
মেয়েদের জরায়ুতে টিউমার কেন হয়
টিউমার বলতে আমরা সাধারণত কোষের অস্বাভাবিক বৃদ্ধিকে বোঝায়। যদিও আমাদের শরীরের
কোন অংশের কোষের অস্বাভাবিক বৃদ্ধি হয় তাহলে সেটিকে আমরা হিউমাস বলে থাকি। একটি
মহিলার জরায়ুতে দুই ধরনের টিউমার হয়ে থাকে। বিশেষ করে ৪০ বছরের ঊর্ধ্বে
মহিলাদের জরায়ুতে টিউমার বেশি দেখা যায়। জরায়ু বিভিন্ন রকম মসৃণ পেশিকোষ
দ্বারা তৈরি।
যখন এই কোষের অতিরিক্ত বৃদ্ধি হয় তখন আমাদের জরায়ুতে ফাইব্রয়েড তৈরি হয়। আর
আমাদের ডিম্বাশয় দ্বারা উৎপন্ন সংবেদনশীল হরমোন ইস্ট্রোজেনের যখন মাত্রা অধিক
হয় তখন টিউমার বৃদ্ধি পায়। সেহেতু মেয়েদের জরায়ুতে পেশীকোষ বৃদ্ধি পেলে তা
টিউমার বলা হয়ে থাকে। এই টিউমার হওয়ার নির্দিষ্ট কোন কারণ এখন পর্যন্ত খুঁজে
পাওয়া যায়নি। ফাইভব্রয়েড টিউমার ততটা ভয়ংকর টিউমার নয়।
এই টিউমার ভয়ের আশঙ্কা অনেক কম থাকে। ঔষধ দ্বারা এই টিউমার প্রাথমিক অবস্থায়
ভালো করা যায়। আর যদি টিউমার একটু বড় হয়ে যায় তাহলে অস্ত্র পাচার করে এই
টিউমারের হাত থেকে রক্ষা পাওয়া যায়। জরায়ুতে টিউমার হলে কি কি সমস্যা হতে পারে
সে সম্পর্কে আমাদের সম্পূর্ণ জ্ঞান থাকা জরুরি। কারণ মেয়েদের জরায়ুতে টিউমার
এখন একটি প্রধান সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
জরায়ু টিউমার চেনার উপায়
মহিলাদের জরায়ুতে টিউমার হলে বিভিন্ন রকম সমস্যা দেখা যায়। আর সেই সকল সমস্যা
দ্বারা চিহ্নিত করা হয় যে জরায়ুতে টিউমার হয়েছে। আপনি যদি জরায়ুতে টিউমার
হয়েছে কিনা সেই সম্পর্কে জানতে চান তাহলে অবশ্যই আপনাকে জানতে হবে জরায়ুতে
টিউমার হলে কি কি সমস্যা হতে পারে।
আরও পড়ুনঃ মিনি স্ট্রোক এর লক্ষণ গুলো জানুন
যদি আপনার জরায়ুতে টিউমার হয়ে থাকে তাহলে পিরিয়ডের সময় অনেক ব্যথা হয়।
সহবাসের সময় ব্যথা হতে পারে। মাঝে মাঝে প্রথম পরিমাণ কোমর ব্যথা হয়ে থাকে। ঘন
ঘন প্রশাব হয়ে থাকে। বিভিন্ন রকম সমস্যা দেখা দেয়। সে সকল সমস্যা দেখে আপনি
বুঝতে পারবেন আপনার জরায়ুতে টিউমার হয়েছে।
জরায়ুর মুখে টিউমারের লক্ষণ
জরায়ুর মুখে টিউমার সাধারণত ৪০ এর উপরের বয়সের মহিলাদের মধ্যে বেশি দেখা দিয়ে
থাকে। যদি কোন মহিলার জরায়ুর মুখে টিউমার হয় তাহলে বিভিন্ন রকম লক্ষণ প্রকাশ
পায়। সে সকল লক্ষণ দেখে খুব সহজেই বোঝা যায় যে জরায়ুর মুখে টিউমার হয়েছে।
জরায়ুর মুখে টিউমার মানে যে ক্যান্সার তা কিছু নয়।
অস্ত্র পাচার করে এই টিউমারের হাত থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব। কিন্তু কিছু কিছু
ক্ষেত্রে এই টিউমার ভয়ংকর আকার ধারণ করতে পারে। তাই অবশ্যই জরায়ুর মুখে টিউমার
হলে আপনাকে সচেতন হতে হবে। জরায়ুর মুখে টিউমারের লক্ষণ গুলো আলোচনা করলাম।
- জরায়ুর মুখে টিউমার হলে সহবাসের সময় ব্যথা হয়ে থাকে।
- টিউমারের আকার বড় হলে তলপেটে ফোলা ভাব দেখা যায়।
- কোমর ব্যথার পরিমাণ অনেকটা বৃদ্ধি পায়।
- অনেক সময় দেখা যায় প্রশাবের চাপ অনেকটা বৃদ্ধি পেয়েছে।
- জরায়ুর মুখে মনে হয় কিছু একটা বেরিয়ে এসেছে।
- তলপেটে প্রচন্ড পরিমাণ ব্যথা হয়ে থাকে।
- অনিয়মিত মাসিকের সমস্যা দেখা যায়।
- জরায়ুর টিউমারের কারণে গর্ভধারণের সমস্যা দেখা দেয়। তাই যদি আপনার গর্ভধারণে সমস্যা হয়ে থাকে তাহলে সেটি জরায়ুর টিউমারের কারণে হতে পারে।
জরায়ুতে টিউমার হলে করণীয়
জরায়ুর টিউমারকে নিরীহ টিউমার ও বলা হয়ে থাকে। কারণ এই ধরনের টিউমার খুব একটা
ভয়ংকর আকার ধারণ করে না। অপারেশন করে জরায়ুর টিউমার থেকে মুক্তি পাওয়া যেতে
পারে। প্রাথমিক পর্যায়ে জরায়ুর টিউমার ঔষধ দ্বারা ভালো হতে পারে।
কিন্তু
জরায়ুর টিউমারের প্রধান চিকিৎসা হচ্ছে অপারেশন। অপারেশন দ্বারা জরায়ুর টিউমার
খুব সহজেই নিরাময় করা যাই। জরায়ু টিউমারের অপারেশন দুই ধরনের হয়ে থাকে।
প্রথমত অপারেশন এর দ্বারা জরায়ু কেটে ফেলে দেওয়া এবং দ্বিতীয়ত জরায়ুর দেয়াল
থেকে ফাইব্রয়েড কেটে নিয়ে তুলে ফেলে দেওয়া। এখনকার সময়ে জরায়ুর অপারেশন দুই
ধরনের হয়ে থাকে ১। ছিদ্র করে টিউমার বের করা ২।
পেট কেটে টিউমার বের করা। এর দুই
ধরনের অপারেশন করার সময় রোগীর অনেক বেশি রক্তপাত হয়ে থাকে। এই অপারেশন করার পর
মেয়েদের গর্ভধারণের সম্ভাবনা অনেকটা কমে যায়। কিন্তু বর্তমানে জরায়ুর টিউমারের
চিকিৎসায় বিশাল পরিবর্তন এনেছে লেজার সার্জারি।
লেজার সার্জারি মাধ্যমে অপারেশন করলে রোগীর কাটা ছেঁড়া কোন কিছুই করা লাগে না।
লেজারের সাহায্যে ল্যাপ্রোস্কোপ ট ও গজ গাইডেন্সে জরায়ুর টিউমার এর চিকিৎসা করা
হয়ে থাকে। এই চিকিৎসা পদ্ধতি উন্নত দেশে বেশি ব্যবহৃত হয়ে থাকে আর এখন
বাংলাদেশেও এই চিকিৎসা পদ্ধতির দ্বারা চিকিৎসা করা হয়ে থাকে।
জরায়ুতে টিউমার হলে কি বাচ্চা হয়
জরায়ুতে টিউমার হলে কি কি সমস্যা হতে পারে
জরায়ুতে টিউমার যেহেতু মহিলাদের একটি প্রধান সমস্যা সেহেতু অবশ্যই মহিলাদের জেনে
রাখা উচিত জরায়ুতে টিউমার হলে কি কি সমস্যা হতে পারে। কারণ আপনি যদি টিউমার হলে
কি কি সমস্যা হতে পারে এই সম্পর্কে না জানেন তাহলে আপনার যদি জরায়ুর কোনরকম
সমস্যা হয়ে থাকে তাহলে তা আপনি সনাক্ত করতে পারবেন না।
তাই অবশ্যই যদি আপনার
জরায়ুর কোনরকম সমস্যা হয়ে থাকে তাহলে বোঝার চেষ্টা করবেন সেই সমস্যা জরায়ুতে
টিউমার এর লক্ষণ নয়তো। আসুন এখন সমস্যা কি কি হতে পারে সেই সম্পর্কে জেনে নেই।
অতিরিক্ত কোমর ব্যথাঃ জরায়ুতে টিউমারের ফলে মহিলাদের অতিরিক্ত কোমর ব্যথা হয়ে থাকে। মাঝে মাঝে এই ব্যথার তীব্রতা অনেক বেশি বেড়ে যায়। তাই আপনার যদি
অতিরিক্ত কোমর ব্যথা করে তাহলে একটু সচেতন হবেন এবং চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়ার
চেষ্টা করবেন।
প্রচন্ড পরিমাণ তলপেট ব্যথাঃ জরায়ুর টিউমারের আরেকটি প্রধান সমস্যা হচ্ছে
তলপেট অনেক ব্যথা করে। টিউমারের আকার যদি বড় হয় তাহলে তলপেটে ফোলা ভাব দেখা
যায় এবং তলপেট ব্যথা করে।
অনিয়মিত মাসিকঃ জরায়ুতে টিউমার হলে অনিয়মিত মাসিক এর সমস্যা দেখা দেয়।
মাসিক ভালো হওয়ার কিছুদিন পর আবার চাকা চাকা আকারে মাসিক দেখা দিয়ে থাকে।
মাসিকের সময় তলপেটে প্রচন্ড পরিমাণে ব্যথা হয়ে থাকে।
গর্ভধারণে সমস্যাঃ জরায়ুতে টিউমার হলে একটি মহিলার গর্ভধারণের বিভিন্ন
রকম সমস্যা হয়ে থাকে। অনেক চেষ্টা করার পরও গর্ভধারণ করতে পারে না। তাই কোন
মহিলার যদি গর্ভধারণে সমস্যা হয়ে থাকে তাহলে থাকে চিকিৎসা করে দেখতে হবে যে সেটি
জরায়ুর টিউমার এর কারণে হচ্ছে না তো।
প্রশাবের চাপঃ জরায়ুর টিউমার এর কারণে প্রশাবের সমস্যা দেখা দেয়।
প্রশাবের চাপ বারবার হয়ে থাকে। ফাইব্রয়েড জরায়ুর সামনের দিকে অবস্থান করলে
প্রশাবের চাপের এই সমস্যা দেখা দিয়ে থাকে।
সহবাসের সময় ব্যথাঃ জরায়ুর মুখে টিউমার হলে সহবাসের সময় অস্বস্তি বোধ
কিংবা ব্যথা হয়ে থাকে। এটি জরায়ুর টিউমার এর একটি গুরুত্বপূর্ণ লক্ষণ।
তলপেট ফুলে যায়ঃ অনেক সময় জরায়ুর টিউমার এর আকার যদি বড় হয় মহিলার
তলপেট অনেকটা ফুলে উঠে। অনেক সময় অনেকে এটি প্রেগনেন্সি ও মনে করেন। তাই অবশ্যই
এরকম কিছু হলে ভালোভাবে পরীক্ষা করুন।
কোষ্ঠকাঠিন্যঃ জরায়ুর টিউমারের ফলে কোষ্ঠকাঠিন্য হয়ে থাকে। ফাইব্রয়েড
যখন জরায়ুর পেছনে অবস্থান করে তখন কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা হয়ে থাকে।
জরায়ুর টিউমার প্রতিরোধের উপায়
একজন মহিলার অতি সংবেদনশীল অঙ্গ হচ্ছে জরায়ু। আর এই জরায়ুর টিউমার হওয়ার
আশঙ্কা থাকে অনেক বেশি। বিশেষ করে ৪০ বছরের উর্ধ্বে মহিলাদের এই সমস্যা দেখা দেই।
তাই বলে এই নয় যে অল্পবয়সী মহিলাদের এই সমস্যা হয় না।
অল্প বয়সী মহিলাদের যদি
জরায়ুতে টিউমার হয় তাহলে তাদের জন্য এটি একটি ভয়ংকর অভিজ্ঞতা হতে পারে। কারণ জরায়ুতে টিউমারের ফলে অনেক সময় অপারেশন করে জরায়ুর টিউমার কেটে ফেলা লাগে
যাতে করে সেই মহিলার গর্ভধারণ করার সম্ভাবনা অনেক কমে যায়।
অনেক সময় জরায়ুর
টিউমার ঔষধ দ্বারা নিরাময় করা যায়। কিন্তু জরায়ুর টিউমার এর প্রধান চিকিৎসা
হচ্ছে অপারেশন। আপনি যদি জরায়ুর টিউমার প্রতিরোধ করতে চান তাহলে আপনাকে সব সময়
সচেতন থাকতে হবে।
শেষ কথাঃ মেয়েদের জরায়ুতে টিউমার কেন হয়
যেহেতু জরায়ুর ফাইব্রয়েড টিউমার সাধারণ টিউমার কোনরকম ক্যান্সার নয় সেহেতু এই
টিউমার যদি হয় তা নিয়ে দুশ্চিন্তা না করে চিকিৎসকের কাছে গিয়ে তার পরামর্শ
অনুযায়ী কাজ করতে হবে।
আশা করছি আমার লেখা মেয়েদের জরায়ুতে টিউমার কেন হয় এই আর্টিকেলটি পড়ে আপনি আপনার প্রয়োজনীয় তথ্য খুঁজে পেয়েছেন। আপনাদের
মাঝে সঠিক তথ্য পৌঁছে দেওয়াই আমার একমাত্র উদ্দেশ্য। এরকম তথ্য পেতে নিয়মিত
আমার লেখা আর্টিকেল গুলো পড়ুন।
দ্যা বর্ষা ওয়েব সাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url