শিশুর অপুষ্টির লক্ষণ সম্পর্কে জানুন এবং সতর্ক হন
আপনার শিশু কি অপুষ্টিহীনতাই ভুগছে। আপনি কি শিশুর অপুষ্টির লক্ষণ সম্পর্কে
জানতে ইচ্ছুক। যদি এমনটা হয় তাহলে আমার লেখা শিশুর অপুষ্টির লক্ষণ এই
আর্টিকেলটি পড়ুন। এই আর্টিকেলে আমি শিশুর অপুষ্টির লক্ষণ এবং শিশুর
অপুষ্টির কারণ সম্পর্কে বিস্তারিতভাবে আলোচনা করেছি।
তাই আপনার শিশুর যদি পুষ্টিহীনতার সমস্যা দেখা দিয়ে থাকে তাহলে শিশুর অপুষ্টির লক্ষণ এই আর্টিকেলটি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পড়ুন। আশা করছি আপনার সকল
প্রয়োজনীয় তথ্য এই আর্টিকেলে খুঁজে পাবেন।
অপুষ্টি কাকে বলে
অপুষ্টি এই কথাটি বলতে গেলে আমরা কমবেশি সকলেই জানি। আমরা সকলেই বুঝি অপুষ্টি
কাকে বলা হয়ে থাকে। আমরা অপুষ্টি কাকে বলে এটা ভালোভাবে জেনে থাকলেও অনেকেই
জানিনা শিশুর অপুষ্টি দূর করার উপায় গুলো কি কি।
আমাদের খাদ্যের ভেতর যখন
পুষ্টিকর খাবারের পরিমাণ কমে যায় তখন আমাদের শরীরে পুষ্টি কম সরবরাহ হয় ফলে
আমাদের শরীর অপুষ্টি জনিত রোগে ভুগে থাকেন।
আরও পড়ুনঃ ভিটামিন সি এর উপকারিতা ও অপকারিতা
আমাদের জীবনযাত্রায় এমন এক অবস্থা দাঁড়িয়েছে আমরা পুষ্টিকর খাবারের চেয়ে
অপুষ্টিকর খাবার কে বেশি গুরুত্ব দিয়ে ফেলছি। ফলে আমাদের শরীর এ বিভিন্ন রকম
অপুষ্টি জনিত রোগ দেখা দিচ্ছে। আমরা যে সকল খাবার খাচ্ছি সেসকল খাবারে যে পরিমাণ
পুষ্টি বিদ্যমান থাকে আমাদের শরীরের তার চেয়ে বেশি পুষ্টি প্রয়োজন হলে বিভিন্ন
রকম অপুষ্টি জনিত রোগ দেখা দেয়।
তাই আমাদের উচিত সবসময়ই আমাদের খাদ্য তালিকায় পুষ্টিকর খাবার এর পরিমাণ বৃদ্ধি
করা। অবশ্যই যে সকল খাদ্যে পুষ্টি রয়েছে সে সকল খাদ্য প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায়
রাখতে হবে।
শিশুর অপুষ্টির লক্ষণ
আপনার শিশু যদি অপুষ্টি জনিত রোগে ভোগে থাকেন তাহলে আপনার শিশুর মাঝে কিছু কিছু
লক্ষণ প্রকাশ পাবে। সে সকল লক্ষণ দেখে আপনি খুব সহজেই বুঝতে পারবেন আপনার শিশুর
শরীরে পুষ্টির স্বল্পতা রয়েছে। যদি আপনার শিশুর শরীরে পুষ্টির স্বল্পতা দেখা
দেয় তাহলে অবশ্যই সেটিকে অবহেলা করা যাবে না। কারণ একটি শিশুর শরীরে পুষ্টি
স্বল্পতা দেখা দিলে নানা ধরনের সমস্যা দেখা দেবে।
একটি শিশুর স্বাভাবিকভাবে বেড়ে ওঠার ক্ষেত্রেও সমস্যা দেখা দেবে। তাই আপনাকে
শিশুর অপুষ্টি দূর করার উপায় সম্পর্কে জানতে হবে। একটি শিশুর শরীরে যদি পুষ্টির
স্বল্পতা দেখা দেয় তাহলে কি কি সমস্যা হতে পারে তা আপনাদের সাথে আমি আলোচনা করব।
শিশুর অপুষ্টির লক্ষণ গুলো বিস্তারিতভাবে আলোচনা করলামঃ
আরও পড়ুনঃ ভিটামিন এ এর অভাবে কি রোগ হয়
অবসাদঃ একটি শিশুর শারীরিক ও মানসিক বিকাশের জন্য পুষ্টিকর খাবার এর
গুরুত্ব অনেক বেশি। তাই একটি শিশুর খাদ্য তালিকায় অবশ্যই সকল ধরনের পুষ্টিকর
খাবার রাখতে হবে।
শিশুর শরীরে যদি কোন এক ধরনের পুষ্টির অভাব দেখা দেয় তাহলে তা
হতে পারে অবসাদের কারণ। তাই আপনার শিশুর মাঝে যদি কোন রকম উদ্বেগ কিংবা অবসাদ এর
লক্ষণ দেখতে পান তাহলে অবশ্যই মনে করবেন সেই শিশু সম্পূর্ণ পরিমাণ পুষ্টি পাচ্ছে
না।
হাড়ে ব্যথা হওয়াঃ আমরা সকলেই জানি শিশু মানেই হচ্ছে চঞ্চল। শিশু
মানেই এখানে দৌড়ানো ঐখানে দৌড়ানো। শিশুরা স্থির কম থাকে। তারা সব সময় ছোটাছুটি
ও লাফালাফি করতে বেশি পছন্দ করে।
তাই একটি শিশুর মাঝে যদি ভিটামিন ডি এর অভাব
দেখা দেয় তাহলে সেই শিশু বিভিন্ন রকম ব্যথার সম্মুখীন হবে। তাই আপনার শিশুর যদি
হারে ব্যথা কিংবা পায়ে ব্যথা হয়ে থাকে তাহলে তাকে ভিটামিন ডি ও ক্যালসিয়াম
যুক্ত খাবার খাওয়াতে হবে।
ঘন ঘন অসুস্থ হওয়াঃ কিছু কিছু শিশু রয়েছে যারা ঘন ঘন অসুস্থ হয়ে
পড়ে। এই ঘন ঘন অসুস্থ হয়ে পড়ার মূল কারণ হচ্ছে শরীরে পুষ্টির অভাব। আপনার শিশু
যদি কিছুদিন পরপর অসুস্থ হয়ে পড়ে তাহলে বুঝবেন তার শরীরে পুষ্টির অভাব রয়েছে।
অবশ্যই তার খাদ্য তালিকায় পুষ্টিকর খাবার যোগ করতে হবে।
এনার্জি কম থাকাঃ বড়দের তুলনায় ছোটদের মাঝে এনার্জি বেশি লক্ষ্য
করা যায়। তারা সব সময় চঞ্চল হয়ে থাকে। তারা এখান থেকে ওখান ছোটা ছুটি করতে
পছন্দ করে। কিন্তু আপনার শিশুর মাঝে যদি এমনটা না থাকে। তার যদি এনার্জি কম থাকে
তাহলে বুঝতে হবে আপনার শিশুর শরীরে পুষ্টির ঘাটতি হয়েছে। তাই তার খাবার তালিকায়
বেশি বেশি পুষ্টিকর খাবার রাখতে হবে।
শারীরিক বৃদ্ধি কমে যাওয়াঃ অন্যান্য শিশুর তুলনায় আপনার শিশুর
শারীরিক বৃদ্ধি যদি কম থাকে তাহলে বুঝবেন আপনার শিশু অপুষ্টি তে ভুগছেন। কারণ
পুষ্টিহীনতা একটি শিশুর শারীরিক বৃদ্ধিতে অনেক বড় বাধা সৃষ্টি করে।
মাড়ি দিয়ে রক্ত পড়াঃ অনেক শিশুর মাঝে এই সমস্যা দেখা দেয়। হঠাৎ
দেখা দেয় শিশুর মাড়ি দিয়ে রক্ত পরছে। আমরা অনেকে বুঝিনা কেন বাচ্চার মাড়ি
দিয়ে রক্ত পড়ে। একটি শিশুর মাড়ি দিয়ে রক্ত পড়ার মূল কারণ হচ্ছে পুষ্টির
অভাব। তাই একটি শিশুর এই সমস্যা হয়ে থাকলে পুষ্টিকর খাবার খাওয়াতে হবে।
শুষ্ক এবং খসখসে ত্বকঃ একটি শিশুর অপুষ্টির লক্ষণ হচ্ছে শুষ্ক এবং
খসখসে ত্বক। আপনার শিশুর যদি ত্বক অনেক বেশি শুষ্ক ও খসখসে হয়ে থাকে তাহলে বুঝতে
হবে আপনার শিশুটি অপুষ্টি জনিত সমস্যায় ভুগছে। তাই তার খাওয়া-দাওয়ার প্রতি
বিশেষ নজর দিতে হবে।
আরও পড়ুনঃ ভিটামিন ই এর উপকারিতা ও অপকারিতা
পেট ফুলে যাওয়াঃ আমাদের আশেপাশে এমন অনেক শিশু রয়েছে যাদের পেট
অনেক বেশি ফুলে থাকে। আর এই পেট ফোলার প্রধান কারণ হচ্ছে পুষ্টির অভাব। আপনার
শিশুর দিকে একটু নজর দিন। আপনার শিশুর ও এই সমস্যা নয়তো। যদি এমনটা হয়ে থাকে
তাহলে আপনার শিশুর খাদ্যাভাস পরিবর্তন করুন।
শিশুর অপুষ্টির কারণ
একটি শিশু বিভিন্ন কারণে অপুষ্টি জনিত সমস্যার সম্মুখীন হয়। তাই একটি শিশুর
প্রতি অবশ্যই বিশেষ নজর রাখতে হবে। শিশুর অপুষ্টি জনিত সমস্যা দেখা দিলে অবশ্যই
তার খাদ্যভাস পরিবর্তন করতে হবে।
তার খাবারে পুষ্টিকর খাবারের পরিমাণ বাড়াতে
হবে। অবশ্যই আপনাকে জানতে হবে শিশুর অপুষ্টির লক্ষণ গুলো কি কি। শিশুর
অপুষ্টির কারণ রয়েছে অনেক। জেনে নিন একটি শিশুর অপুষ্টির কারণ গুলো কি।
- অনেক শিশু রয়েছে যাদের শরীরে যতটুকু খাদ্যের প্রয়োজন সে ততটুকু খাদ্য খেতে চায় না। তার খাবারের প্রতি অনীহা দেখা যাই। অল্প খাবারের ফলে তার শরীরে যতটুকু পুষ্টি যাওয়া প্রয়োজন ততটুকু পুষ্টি পৌঁছাতে পারে না। ফলে অপুষ্টি জনিত সমস্যা দেখা দেয়।
- অনেক মা রয়েছে যারা বাচ্চার খাওয়া-দাওয়া সঠিক সময় সম্পর্কে সচেতন নয়। একটি শিশুর ঠিক কতক্ষণ পর খাওয়া উচিত তা গুরুত্ব দেয় না। সঠিক সময়ে খাবার গ্রহণ না করাই শিশুর অপুষ্টির জনিত সমস্যা দেখা দেয়।
- কিছু কিছু ক্ষেত্রে দেখা যায় বাচ্চার হজমের বিভিন্ন রকম সমস্যা হয়। যার ফলে বাচ্চা খাবার খাওয়ার পর ও হজম এর সমস্যার কারণে শরীর সঠিক পরিমাণ পুষ্টি গ্রহণ করতে পারেনা।
- অনেক শিশুর ক্ষেত্রে দেখা যায় শারীরিক ক্রিয়া-কলাপ একটু কম থাকে। যারা বসে বসেই টিভি কিংবা মোবাইল দেখে সময় পার করে। যার ফলে তাদের হজম প্রক্রিয়া ধীর হয়ে যাই। এর ফলেও একটি শিশু অপুষ্টি জনিত সমস্যায় পড়তে পারে।
- অনেক মা রয়েছে যারা শিশুকে খাওয়ানোর সময় তাদের মেজাজ খিটখিটে হয়ে থাকে। যার ফলে একটি শিশুর প্রতি খারাপ প্রভাব পড়ে। এই কারণেও একটি শিশু অপুষ্টি জনিত সমস্যার সম্মুখীন হয়। তাই একটি শিশুকে খাওয়ানোর সময় অবশ্যই মা এর ব্যবহার খুব সুন্দর ও ভালো হতে হবে।
শিশুর অপুষ্টি দূর করার উপায়
আমাদের আশেপাশের অনেক শিশু রয়েছে যারা অপুষ্টিজনিত সমস্যায় ভুগছে। তাদের মাঝে
কিছু কিছু লক্ষণ দেখে আমরা সহজে বুঝতে পারি শিশুটির শরীরে পুষ্টির অভাব রয়েছে।
আমরা এটা বোঝার পরেও অনেক সময় খুব একটা গুরুত্ব দেই না। যার ফলে একটি শিশুর নানা
রকম সমস্যা দেখা দেয়। শরীরে পুষ্টির অভাব হলে অনেক সময় মারাত্মক সমস্যা হতে
পারে। শিশুর মৃত্যুর আশঙ্কা ও করা যায়। তাহলে আমরা জেনে নেই শিশুর অপুষ্টি দূর
করার উপায় কি।
শিশুর অপুষ্টি দূর করার জন্য আমাদের সঠিক খাদ্য অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে। একজন
অপুষ্টি জনিত সমস্যায় আক্রান্ত শিশু সাধারণ শিশুর চেয়ে ১০ গুণ বেশি রোগা বা
খারাপ হয়ে থাকে। তাই একজন অপুষ্টি সমস্যায় আক্রান্ত শিশুকে প্রতিদিন নিয়ম করে
ফল ও শাকসবজি খেতে দিতে হবে। তার খাওয়ার প্রতি একটু বিশেষ নজর দিতে হবে।
সঠিক সময়ে সঠিক পরিমাণে খাওয়ার খাওয়ানোর চেষ্টা করতে হবে। প্রতিদিন তার
খাদ্যের তালিকায় সকল ধরনের ভিটামিন এর খাদ্য রাখতে হবে। শাকসবজি এর পাশাপাশি
মাছ, মাংস, ডিম, মসুর ডাল ইত্যাদি প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার খাওয়াতে হবে। সব সময়
তাকে এক্টিভ রাখার চেষ্টা করতে হবে।
অপুষ্টি জনিত রোগের নাম
শিশুদের শরীরে যদি পুষ্টির অভাব দেখা দেয় তাহলে কিছু কিছু রোগ হয়ে থাকে। সে সকল
রোগ পুষ্টির অভাবে হয়ে থাকে। আর সেই রোগ থেকে বাঁচার জন্য অবশ্যই শিশুকে নিয়মিত
পুষ্টিকর খাবার খাওয়াতে হবে। আসুন অপুষ্টি জনিত রোগের নাম গুলো জেনে নিই।
- নিউমোনিয়া
- ম্যালেরিয়া
- রাতকানা
- মুখের কোনায় ঘা
- রিকেটস
- রক্তস্বল্পতা
- স্কার্ভি
- শারীরিক বৃদ্ধিতে বাধা
- দুর্বলতা
- চোখের বিভিন্ন রকম সমস্যা
শেষ কথা
আশা করছি আমার লেখা শিশুর অপুষ্টির লক্ষণ আর্টিকেলটি পড়ে আপনি আপনার
প্রয়োজনীয় তথ্য খুঁজে পেয়েছেন। এরকম প্রয়োজনীয় সকল তথ্য দিয়ে আমার আর্টিকেল
গুলো সাজানো হয়েছে।
এইরকম আরো প্রয়োজনীয় তথ্য পেতে নিয়মিত আমার লেখা আর্টিকেল
গুলো পড়ুন। আশা করছি আমার লেখা আর্টিকেলগুলো পড়ে আপনারা উপকৃত হবেন। আপনাদের
মাঝে সঠিক তথ্য পৌঁছে দেওয়া আমার একমাত্র উদ্দেশ্য।
দ্যা বর্ষা ওয়েব সাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url