খিঁচুনি রোগের লক্ষণ জানুন ও এখনি সতর্ক হন
শিশুর জ্বর ১০২ হলে করনীয় জানুনআপনার কি মনে হচ্ছে আপনার বাচ্চা অস্বাভাবিক কিছু আচরণ করছে। এটা খিঁচুনির লক্ষণ
নয় তো। আপনার মনে সন্দেহ থাকলে আমাদের লেখা খিঁচুনি রোগের লক্ষণ এই আর্টিকেলটি পড়ুন। এই
আর্টিকেলে আমি বিস্তারিত ভাবে খিঁচুনি রোগের লক্ষণ এবং বাচ্চাদের কেন হয় বিস্তারিত ভাবে আলোচনা করার চেষ্টা করেছি।
আশা করছি আমাদের লেখা খিঁচুনি রোগের লক্ষণ এই আর্টিকেলটি পড়ে আপনি
আপনার প্রয়োজনীয় তথ্য খুঁজে পাবেন। সেহেতু প্রয়োজনীয় তথ্য পেতে অবশ্যই
আর্টিকেলটি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পড়ুন।
খিঁচুনি হলে কি হয়
খিঁচুনি কি আমরা কি তা বিস্তারিতভাবে কিংবা সঠিকভাবে বলতে পারবো। আমরা কম-বেশি
সবাই খিঁচুনি শব্দের সাথে পরিচিত। কোনো না কোনো জায়গায় এই শব্দের কথা শুনেছি।
তাছাড়াও আমাদের আশেপাশের কারো এই রোগ রয়েছে। আমরা সকলে খিঁচুনি রোগ সম্পর্কে
জানলেও এই রোগ সম্পর্কে বিস্তারিতভাবে অনেকেই জানেনা। যে কারণে এই রোগের লক্ষণ
দেখলে অনেকে বুঝতে পারে না। খিঁচুনি অনেক ধরনের দেখা যায়।
কারো কারো সারা শরীরে খিঁচুনি দেখা যায় আবার কারো কারো শরীরের কোন এক দিকে
খিঁচুনি হয়ে থাকে। তাই কারো এ সমস্যা দেখা দিলে অবশ্যই ভালোভাবে লক্ষ্য করতে
হবে। অনেক নবজাতক শিশু রয়েছে যাদের জন্মের পর এই সমস্যা দেখা দিয়ে থাকে। তাই
যদি কোন শিশুর এই সমস্যা হয়ে থাকে তাহলে যত দ্রুত সম্ভব চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে
হবে।
একটি মানুষের খিঁচুনি হলে বিভিন্ন রকম সমস্যা দেখা দিয়ে থাকে। রোগীর খিঁচুনি
উঠলে অস্বাভাবিকভাবে এদিক-ওদিক তাকায়। শ্বাস-নিশ্বাস নেওয়ার ধরন পাল্টে যাই।
পুরো শরীর শক্ত হয়ে যায়। শরীরের সারা দিতে অক্ষমতা দেখা দেয়। পুরো শরীর
ঝাঁকুনি দিয়ে নড়াচড়া করে ওঠে।
খিঁচুনি রোগের লক্ষণ
আমরা অনেকেই মনে করি খিঁচুনি হওয়া মানেই মৃগী রোগের লক্ষণ। কিন্তু আসলেই সব
ধরনের খিঁচুনি মৃগী রোগের লক্ষণ নয়। কিছু কিছু খিঁচুনি রয়েছে যেগুলোর সাথে মৃগী
রোগের কোন সম্পর্ক নেই। অনেক সময় নবজাতক শিশুর খিঁচুনি দেখা দিয়ে থাকে যা একটি
শিশুর জন্য মারাত্মক ক্ষতির কারণ হতে পারে।
তাই অবশ্যই আমাদের খিঁচুনি রোগের লক্ষণ সম্পর্কে জেনে থাকতে হবে। যখন কোন
ব্যক্তির কিংবা বাচ্চার খিঁচুনির সমস্যা দেখা দিবে তখন তৎক্ষণাৎ চিকিৎসকের কাছে
নিয়ে যেতে হবে। একজন ব্যক্তির খিঁচুনি দেখা দিলে কি কি লক্ষণ প্রকাশ পায় তা
জেনে নিন।
- একটি ব্যক্তির খিঁচুনির সমস্যা হলে তার তাকানোর পরিবর্তন দেখা যায়। অস্বাভাবিকভাবে এদিক ওদিক তাকিয়ে থাকে।
- খিঁচুনি রোগের রোগী শ্বাস নিঃশ্বাস অতি দ্রুত এবং জোরে জোরে নিয়ে থাকে।
- একজন ব্যক্তির খিঁচুনির সমস্যা দেখা দিলে পুরো শরীর শক্ত হয়ে যায়।
- খিঁচুনির রোগীর শরীর ও মাথা ও স্বাভাবিকভাবে ঝাঁকুনি দিয়ে নড়াচড়া করে থাকে।
- সে ব্যক্তি নিজের উপর কোন নিয়ন্ত্রণ আনতে পারে না।
- অনেক সময় রোগী অজ্ঞান হয়ে যাই।
খিঁচুনি রোগ কি ভালো হয়
অনেক মানুষ রয়েছে যাদের মনে এইটা প্রশ্ন জাগে খিঁচুনি রোগ কি ভাল হয়। তারা মনে
করেন যাদের খিঁচুনি রোগ রয়েছে তাদের এই রোগ কখনোই ভালো হবার নয়। কিন্তু বাস্তব
কথা এই যে ১০০% এর মধ্যে ৯০% ব্যক্তির খিঁচুনি সমস্যা ভালো হয়ে থাকে।
কিছু কিছু ক্ষেত্রে খিঁচুনি রোগে আক্রান্ত রোগী দুই থেকে পাঁচ বছর ঔষধ খেয়ে এই
রোগের হাত থেকে মুক্তি পেতে পারেন। তাই অবশ্যই আমাদের এইটা ভাবা উচিত নয় যে
ব্যক্তির খিঁচুনি রোগ রয়েছে তার এই রোগ কখনোই ভালো হবার নয়।
আরও পড়ুনঃ নবজাতকের চোখ দিয়ে পানি পড়ার কারণ
একটি বাচ্চার যদি খিঁচুনি সমস্যা দেখা দিয়ে থাকে তাহলে যত দ্রুত সম্ভব চিকিৎসকের
পরামর্শ নিয়ে চিকিৎসা করিয়ে এই রোগ থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব। একজন ব্যক্তির
যদি খিঁচুনির সমস্যা হয়ে থাকে তাহলে সেটিকে অবহেলা না করে অবশ্যই গুরুত্ব দেওয়া
উচিত।
বাচ্চাদের খিঁচুনি কেন হয়
আপনি কি জানেন বাচ্চাদের খিঁচুনি কেন হয়। যদি না জেনে থাকেন তাহলে অবশ্যই জেনে
নেওয়া উচিত। কারণ অনেক নবজাতক শিশু রয়েছে যাদের এরকম খিঁচুনির সমস্যা দেখা
দেয়। যা একটি শিশুর জন্য মারাত্মক আকার ধারণ করতে পারে। কারণ একটি শিশুর খিঁচুনি
তার মস্তিষ্কে অনেক বড় প্রভাব ফেলতে পারে।
আমরা অনেকেই জানিনা বাচ্চাদের খিঁচুনি কেন হয় তাই এ বিষয়ে আমাদের
অবশ্যই জানতে হবে। একটি নবজাতক শিশুর বিভিন্ন কারণে খিঁচুনি হতে পারে। অনেক শিশু
রয়েছে যাদের শ্বাস নিঃশ্বাস নেওয়ার সমস্যার কারণে খিঁচুনি দেখা দিতে
পারে।
আরও পড়ুনঃ পেটের ডান পাশে ব্যথা হওয়ার কারণ
বিভিন্ন সময় শিশুর মস্তিষ্কে ইনফেকশনের কারণেও একটি শিশুর খিঁচুনির সমস্যা হতে
পারে। কিছু কিছু বাচ্চা রয়েছে যাদের রক্তে সুগার কমে যাওয়ার কারণে খিঁচুনি দেখা
দেয়। একটি বাচ্চার খিঁচুনির সমস্যা থেকে বিভিন্ন রকম বড় বড় সমস্যা হয়ে
থাকে।
একটি শিশু খিঁচুনি রোগে আক্রান্ত হওয়ার পর যদি সঠিক সময়ে সঠিক নিয়মে
চিকিৎসা না করানো যাই তাহলে এটি শিশুর স্বাভাবিক ভাবে বেড়ে ওঠায় বাধা দিয়ে
থাকে। একটি শিশুর বৃদ্ধির সাথে সাথে তার ব্যবহারে অনেক রকম অস্বাভাবিক আচরণ দেখা
দিয়ে থাকে। তাই অবশ্যই একটি নবজাতক বাচ্চার যদি খিঁচুনির সমস্যা দেখা দেয় তাহলে
তৎক্ষণাৎ চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
বাচ্চাদের খিঁচুনি হলে করণীয়
আমরা অনেকেই বাচ্চাদের খিঁচুনি হলে করণীয় কি কি তা জানিনা। এই কারণে অনেক সময়
অনেক রকম ভুল ব্যবস্থা গ্রহণ করে ফেলি যার ফলে একটি শিশুর মারাত্মক ক্ষতি হতে
পারে। তাই আমাদের অবশ্যই এইসব সম্পর্কে জানতে হবে এবং সচেতন হতে হবে। আমরা যদি
সচেতন না হয় তাহলে একটি শিশুর জীবন যেতে পারে।
- একটি শিশুর যদি খিঁচুনি ওঠে তাহলে অবশ্যই শিশুকে কাত করে ও মাথা সোজা করে শুয়ায়ে দিতে হবে। যাতে করে মুখের লালা বের হয়ে আসে। তা মুখের ভেতরে আটকে যেন নিঃশ্বাসের সমস্যা না করতে পারে।
- শিশুর খিঁচুনি উঠলে হাত পা অস্বাভাবিক ভাবে নাড়াচাড়া করতে থাকে তাই অবশ্যই এমন কোন জায়গায় রাখা যাবে না যেখানে সেই শিশু কোন কিছু দ্বারা আঘাত পায়।
- একটি শিশুর খিঁচুনি উঠলে অবশ্যই বিশেষভাবে নজর দিতে হবে সেই খিঁচুনি কতক্ষণ স্থায়ী।
- একটি বাচ্চার খিঁচুনি উঠলে কখনোই তার হাত-পা চেপে ধরে রাখা যাবে না।
- খিঁচুনি ওঠার পর যদি কোন শিশুর নিঃশ্বাস নিতে সমস্যা হয়ে থাকে তাহলে মুখ দিয়ে শ্বাস দিতে হবে।
- কোন বাচ্চার খিঁচুনি যদি জ্বর এর সাথে আসে তাহলে তৎক্ষণাৎ জ্বর কমানোর ব্যবস্থা করতে হবে।
- যদি সম্ভব হয় তাহলে বাচ্চার খিঁচুনির ভিডিও করে রাখতে পারেন। এটি পরে চিকিৎসকের চিকিৎসার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।
- একটি শিশুর খিঁচুনি উঠলে অবশ্যই তাকে কোন কিছু খাওয়ানো যাবে না।
- খিঁচুনি ওঠার পর যত দ্রুত সম্ভব শিশুকে কাছের হাসপাতাল নিয়ে যেতে হবে।
নবজাতকের খিঁচুনি হলে কি সমস্যা হবে
আমরা কমবেশি সকলেই খিঁচুনি রোগের সাথে পরিচিত। এই রোগ নবজাতক শিশু থেকে শুরু করে
বৃদ্ধ প্রায় সকল বয়সের মানুষের মাঝে দেখা যায়। গ্রামাঞ্চলে এই রোগের সবচেয়ে
বড় ঔষধ মনে করে ঝাঁড়া ফুঁ দেওয়া। যে কারণে তারা চিকিৎসকের কাছে না গিয়ে
বিভিন্ন কবিরাজ এর কাছে যাই।
যার ফলে এই রোগ মারাত্মক আকার ধারণ করে। একটি শিশুর খিঁচুনি রোগের সঠিক চিকিৎসা
না করা হলে তার বেড়ে ওঠায় অস্বাভাবিক কিছু কিছু লক্ষণ প্রকাশ পায়। তাই অবশ্যই
একটি নবজাতক শিশুর যদি এই সমস্যা হয়ে থাকে তাহলে সঠিক চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে
হবে। খিচুনি রোগের লক্ষণ জেনে নিন।
- একটি নবজাতক শিশুর খিঁচুনি হলে শিশু ঝিমিয়ে পড়তে পারে।
- নবজাতক শিশুর মাঝে বুকের দুধ খেতে অনীহা দেখা দিতে পারে।
- অনেক সময় শিশুর ত্বক হঠাৎ শীতল হয়ে যায়।
- তীব্র মাত্রায় জ্বর বেড়ে যায়।
- নবজাতক শিশুর শ্বাস-নিশ্বাস এর গতি বৃদ্ধি পায়।
- নবজাতক শিশুর বুক অনেক দ্রুত ওঠানামা করতে থাকে।
- অনেক সময় শিশুর গলায় ঘড় ঘড় শব্দ শোনা যায়।
- শিশুর হাত পা অনেকটা শক্ত হয়ে যায়।
এ সকল লক্ষণ গুলোর মধ্যে যদি বেশিরভাগ লক্ষণ একটি শিশুর মাঝে প্রকাশ পায় তাহলে
আপনি ধরে নিতে পারেন শিশুটির খিঁচুনির সমস্যা হয়েছে তাই যত দ্রুত সম্ভব কাছের
হাসপাতাল কিংবা চিকিৎসকের নিকট শিশুটিকে নিয়ে যেতে হবে এবং চিকিৎসকের পরামর্শ
অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে হবে।
খিঁচুনি রোগের ডাক্তার
আমাদের দেশে এখনো বিভিন্ন গ্রাম অঞ্চলে লক্ষ্য করা যায় খিচুনির মতো সমস্যা দেখা দিলে তারা প্রথমেই কোন কবিরাজ অথবা বৈদ্য এর কাছে রোগীকে নিয়ে দৌড়াদৌড়ি করেন। বিভিন্ন রকম ঝাড়া ফুঁ অথবা গাছামো ঔষধ খাওয়াই। তারা মনে করেন এর সাহায্যেই রোগী স্বাভাবিক হয়ে যাবে। কিন্তু এটি একেবারেই ভুল ধারণা।
আপনাদের পরিবারের কিংবা আশেপাশেরও কারো খিঁচুনি দেখা দিলে কোন কবিরাজ এর কাছে না নিয়ে গিয়ে নিকটস্থ চিকিৎসকের নিকট নিয়ে যান। আপনার নিকটস্থ যেকোনো ভালো নিউরোলজি বিভাগের ডাক্তারের কাছে রোগীকে নিয়ে যেতে হবে। কারণ নিউরোলজি বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা.মো. হাসানুজ্জামান বলেছেন যে ৯০% খিচুনি রোগী ওষুধ খাওয়ার মাধ্যমে ভালো থাকেন।
আর দুই থেকে পাঁচ বছর ওষুধ খেয়ে ৬০-৭০% রোগীর ভালো হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। কিন্তু গাছামো ঔষধ খেয়ে রোগী ভালো হয়ে যাবে এর কোন গ্যারান্টি নেই। তাই এ সমস্যা দেখা দিলে কবিরাজ এর কাছে না গিয়ে ডাক্তারের কাছে যান।
শেষ কথা
আশা করছি খিঁচুনি রোগের লক্ষণ এ আর্টিকেলটি পড়ে আপনার
প্রয়োজনীয় তথ্যটি খুঁজে পেয়েছেন। এরকম আরও প্রয়োজনীয় তথ্য পেতে নিয়মিত আমাদের লেখা আর্টিকেলগুলো পড়ুন। এরকম প্রয়োজনীয় তথ্যর প্রেক্ষিতে আমার লেখা
আর্টিকেলগুলো সাজানো হয়েছে।
আমাদের একমাত্র মূল উদ্দেশ্য আপনাদের মাঝে সঠিক তথ্য তুলে ধরার। এই আর্টিকেল
পড়ে যদি কোন এক ব্যক্তি উপকৃত হয়ে থাকেন তাহলে এটি আমার জন্য অনেক বড় পাওয়া। আমাদের আর্টিকেলে যদি কোন রকম ভুল থাকে তাহলে আমায় জানাবেন আমরা তা সংশোধন করার
চেষ্টা করব।
দ্যা বর্ষা ওয়েব সাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url